বীর প্রতীক নজরুল ইসলাম
নজরুল ইসলাম, বীর প্রতীক (জন্ম ১৯৪৭) অনারারি লেফটেন্যান্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৪৭ সালের ২২শে জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের চরবাতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. কেরামত আলী ও মাতার নাম মোছা. লুৎফন্নেছা।
নজরুল ইসলাম ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি পাকিস্তানের বিভিন্ন নৌঘাঁটিতে নিয়োজিত ছিলেন। ৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ২ মাসের ছুটি নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে আসেন। এ- সময় বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির ওপর তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি খুবই উদ্বুদ্ধ হন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পাবনার কাশীনাথপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধযুদ্ধ হয়। নৌবাহিনীর প্রশিক্ষিত সৈনিক হিসেবে তিনি এ-যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি ভারতে চলে যান এবং মুক্তিবাহিনীর আত্মঘাতী নৌ-কমান্ডো দলে যোগ দেন। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে তিনি অপারেশন জ্যাকপট-এর অধীনে মংলা বন্দর অপারেশনসহ আরো কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।
অক্টোবর মাসের শেষদিকে এক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় তিনি হানাদার বাহিনীর চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস করেন। উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য এ সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন ব্যর্থ হওয়ায় নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নৌকমান্ডোরা এ দায়িত্ব নেন। ঘটনার দিন গোপন ঘাঁটি থেকে মধ্যরাতে তাঁরা হানাদার বাহিনীর কড়া পাহারা এবং গানবোটের সার্চলাইটের আলোর মধ্যে গোপনে নদীর প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে রেলসেতুর নির্দিষ্ট পিলারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। অনেক কষ্টে নির্দিষ্ট পিলারে পৌঁছে ওপরে উঠে সেতুর দুপাশের লোহার ফেঞ্চিং-এ ডেটোনেটর ফিট করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে এ কাজ শেষ করে সেফটি ফিউজ অন করে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে স্রোতের অনুকূলে সাঁতরে নিরাপদ স্থানে চলে যান। ১০-১৫ মিনিট পরই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে লোহার বিরাট রেলিং সেতুর ওপর ভেঙ্গে পড়ে৷
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান ও বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার নজরুল ইসলামকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি নৌবাহিনীর চাকরিতে বহাল হন। তাঁর স্ত্রীর নাম রওনক জাহান। এ দম্পতি ১ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তানের জনক-জননী। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড