You dont have javascript enabled! Please enable it!

ধোবাজোড়া গণহত্যা (মিটামইন, কিশোরগঞ্জ)

ধোবাজোড়া গণহত্যা (মিটামইন, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১লা সেপ্টেম্বর। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী শহীদ হন।
কিশোরগঞ্জ জেলার মিটামইন উপজেলার কেওয়াজোর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ধোবাজোড়া। এটি হাওর অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এ গ্রামের কয়েকজন যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। গ্রামের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন রফিকুর রহমান ভূঁইয়া, মজিবুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ। ধোবাজোড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলা-বারুদ নিয়ে বিভিন্ন সময় আশ্রয় নিতেন। ১লা সেপ্টেম্বর সকালে রাজাকার কমান্ডার কুরবান আলী, মানিক মিল্কী ও অন্যদের সহায়তায় ক্যাপ্টেন আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে ইটনা ক্যাম্প থেকে এসে পাকিস্তানি সেনারা ধোবাজোড়া গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে আব্দুর রউফ রুকন, আন্নর আলী এবং বুধু ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে মারা যান। তাদের গুলিতে মজনু ভূঁইয়া ও ইদ্রিস মিয়া নামের দুটি শিশু মারাত্মকভাবে আহত হয়।
এরপর হানাদাররা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গনি ভূঁইয়া, নিকলী হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল লতিফ ভূঁইয়া ও সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোকনুজ্জামান ভূঁইয়া, আইনের ছাত্র আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, কলেজ ছাত্র নূর আলী ভূঁইয়া, হাইস্কুলের ছাত্র আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া, ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া, আবু জামাল মিয়া, চান্দু মিয়া প্রমুখের ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য দেয়ার জন্য শারীরিক নির্যাতন চালায়। কিন্তু কোনো তথ্য বের করতে ব্যর্থ হয়ে হানাদাররা গ্রাম থেকে বেঁধে অনেককে ইটনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাজাকাররা ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান অনেক জিনিস হস্তগত করে। অনেক বাড়িতে তারা আগুন দেয়। আগুনের তাপে এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের লুকিয়ে রাখা দুটি গ্রেনেড বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে হানাদাররা আরো বেপরোয়া তাণ্ডব চালায়। পাকিস্তানি সেনারা ধোবাজোড়া থেকে আটক করা অনেককে ইটনা থানার বয়রা বটমূলে নিয়ে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের শিকার অনেকের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের ১৮ জন ধোবাজোড়া গ্রামের। তারা হলেন— আ. মজিদ ভূঁইয়া (পিতা মো. সওদাগর ভূঁইয়া), আ. মতিন ভূঁইয়া (পিতা আ. মজিদ ভূঁইয়া), আ. রশিদ ভূঁইয়া (পিতা আ. মজিদ ভূঁইয়া), জহির উদ্দিন ভূঁইয়া (পিতা শুকুর মাহমুদ ভূঁইয়া), রমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া (পিতা শুকুর মাহমুদ ভূঁইয়া), সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া (পিতা আ. লতিফ ভূঁইয়া), আ. লতিফ ভূঁইয়া (পিতা সফদর আলী ভূঁইয়া), মো. নূর আলী ভূঁইয়া (পিতা আমজত আলী ভূঁইয়া), মো. বুধু ভূঁইয়া বুইধ্যা (পিতা আমজত আলী ভূঁইয়া), মো. চান্দু মিয়া (পিতা আব্দুল করিম), মো. সিরাজ মিয়া (পিতা আব্দুল করিম), মো. রমজান আলী ভূঁইয়া (পিতা আমজত আলী ভূঁইয়া), আনোয়ার আলী (পিতা আব্দুল ফকির), আ. গনি ভূঁইয়া চেয়ারম্যান (পিতা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া), আব্দুল খালেক ভূঁইয়া (পিতা আ. ছোবহান ভূঁইয়া), আব্দুর রউফ ভূঁইয়া (পিতা আ. গনি ভূঁইয়া), আ. মান্নান ভূঁইয়া (পিতা আ. আজিজ ভূঁইয়া) এবং রোকনুজ্জামান ভূঁইয়া (পিতা আ. আজিজ ভূঁইয়া)। বাকি তিনজনের একজন সরাইল উপজেলার। তিনি হলেন- মো. আবু জামাল ওরফে জাহের মিয়া (পিতা রাজা মিয়া, বগের)। অন্য দুজনের শুধু নাম জানা যায়। তারা হলেন- আবু জাফর খান ও মো. রফিক। [শেখ অলিনেওয়াজ অলিউল্লাহ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!