You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁ সদর উপজেলা

নওগাঁ সদর উপজেলা ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- কর্তৃক পাকিস্তানি বাহিনীর যে-কোনো আক্রমণ প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে নওগাঁয় মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ এমএনএ-কে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় সংগাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের অন্য সদস্যবৃন্দ হলেন এ কে এম এ রকিব (ন্যাপ-মোজাফফর), আ ন ম মোজাহারুল হক পোনা (ন্যাপ-ভাসানী), এ কে এম মোরশেদ, এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল জলিল প্রমুখ। পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৬শে মার্চ নওগাঁ বার এসোসিয়েশন ভবনে। সভায় স্বাধীনতার একটি সংক্ষিপ্ত ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয় এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী এদিন সকালে বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে অপেক্ষমাণ উৎসুক জনতার সামনে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন সংগ্রাম পরিষদের সদস্য এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম। ঘোষণাপত্রটি ছিল নিম্নরূপ:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আমি মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ জাতীয় সংসদ সদস্য এতদ্বারা ঘোষণা করিতেছি যে, সমগ্র সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের ভৌগোলিক এলাকায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন এখন হইতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পরিচালিত হইবে। স্থানীয়ভাবে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের তত্ত্বাবধানে জাতীয় স্বার্থ ও আদর্শের প্রেক্ষিতে এবং সরকারী নির্দেশ মতে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনিক কাজ নির্বাহ হইবে।
(স্বাঃ)
মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ
জাতীয় সংসদ সদস্য

নওগাঁ ইপিআর উইংয়ে একমাত্র ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া আর সকল অফিসারই ছিল অবাঙালি। মহকুমা প্রশাসকও ছিলেন নিসারুল হামিদ নামে একজন অবাঙালি। মার্চের শুরুতে বাঙালি মেজর নাজমুল হক ইপিআর-এর উইং কমান্ডার হিসেবে পোস্টিং পাওয়া সত্ত্বেও তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করতে থাকে পাকিস্তানি মেজর আকরাম বেগ। কিন্তু আব্দুল জলিলসহ সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের চাপে ১৮ই মার্চ সে মেজর নাজমুলকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। ২৩শে মার্চ নওগাঁ বার ভবন তথা সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিনই মহকুমা প্রশাসক নিসারুল হামিদসহ তিনজন অবাঙালি ইপিআর কর্মকর্তাকে সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও উইং কমান্ডার মেজর নাজমুল হক গ্রেপ্তার করে ইপিআর ক্যাম্পে বন্দি করে রাখেন। এ-সময় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ বাইতুল্লাহ এমএনএ ভারতীয় সীমান্তে অবস্থান করায় ভারপ্রাপ্ত বাঙালি মহকুমা প্রশাসক এম এ আজিজ এবং সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য আব্দুল জলিলের সম্মতিক্রমে বাঙালি ইপিআররা তাদের হত্যা করে।
নওগাঁ শহরের হোটেলপট্টির পাশে কাজীপাড়ার সাবেক এমসিএ কাজী শাহ মাহমুদের মালিকানাধীন হস্তচালিত প্রেস থেকে ৩০শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দৈনিক পত্রিকা জয় বাংলা প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রেসের নাম মুদ্রিত হতো না এবং জয় বাংলা নামের ওপরে ‘স্বাধীন বাংলার একমাত্র মুখপত্র ‘ কথাটি মুদ্রিত হতো। নওগাঁয় পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত প্রকাশিত এ পত্রিকাটি অত্র এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় ফুটবল দলের কৃতী ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু শহরের চকদেবপাড়ায় প্রায় একশ তরুণকে পিটি-প্যারেড করিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। নওগাঁ ডিগ্রি কলেজে রক্ষিত ডামি রাইফেল এ প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হয়।
১৭ই এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতা ও সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য আব্দুল জলিল (বর্তমানে প্রয়াত) পাকসেনাদের মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় ভারী অস্ত্র সংগ্রহে সীমান্তবর্তী বালুরঘাটে যান। ফিরে আসার সময় তিনি সীমান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ইপিআর ও পুলিশদের নিয়ে চকচণ্ডীতে একটি এবং ৭৪ জনকে নিয়ে বাঙালিপুরে অপর একটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। চকচণ্ডী ক্যাম্পের দায়িত্ব গ্রহণ করেন নওগাঁর মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা মুজাফ্ফর রহমান চৌধুরী আর বাঙালিপুর ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেন ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু। বাঙালিপুর ক্যাম্পটি মুক্তিযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বড় যুব অভ্যর্থনা ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে জাকারিয়া পিন্টু কোলকাতা গিয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করেন এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে, এ কে এম এ রকিব, ময়নুল হক মুকুলসহ বাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে প্রধানত
ছাত্র ইউনিয়ন-এর কর্মীদের জন্য পশ্চিম দিনাজপুর জেলার আত্রাই নদীর কোলঘেঁষা বোয়ালদার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোখলেছুর রহমান রাজা, ফরমুজুল হক পান্না, আবদুল মালেক, শফিকুল ইসলাম খান, ময়নুল হক মুকুল, দেওয়ান শহীদ হাসান, আবু রাজা হাশেম আলী, ওহিদুর রহমান, আফজাল হোসেন, জালাল হোসেন চৌধুরী, আকতার আহমেদ সিদ্দিকী এবং সিরাজুল ইসলাম।
২২শে এপ্রিল বগুড়া ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে সান্তাহার হয়ে পাবাহিনী নওগাঁয় অনুপ্রবেশ করে। পাকহানাদার বাহিনীর নওগাঁ থানা দখল-এর আগে তারা বিমান হামলা ও শেলিং দ্বারা ত্রাস সৃষ্টি করে। অনুপ্রবেশকালে তারা কয়েকজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এবং নওগাঁ কে ডি হাইস্কুল, ইপিআর (রাজবাড়ি), হাট নওগাঁ হাইস্কুল এবং মরসুলা গার্লস হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে।
নওগাঁয় পাকবাহিনী প্রবেশের পূর্বেই ধনাঢ্য অবাঙালি ব্যবসায়ী বেচন বিহারিকে চেয়ারম্যান, এডভোকেট বদিউল আলমকে ভাইস-চেয়ারম্যান এবং মো. শামসুদ্দিনকে সেক্রেটারি করে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলো- লাহা প্রামাণিক, আহাদ উল্লাহ, ডা. সোলায়মান, আহম্মদ উল্লাহ প্রমুখ। অনেক অবাঙালি এর সদস্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে তারা পাকসেনাদের সহযোগী হিসেবে নওগাঁর বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
২০শে এপ্রিল সশস্ত্র অবাঙালিরা হৃদয়বন্ধু দাস ও দুজন নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২২শে এপ্রিল নওগাঁ দখল করার প্রাক্কালে পাকসেনারা আকালু নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ার অভিযোগে লর্ড লিটন ব্রিজের নিকট ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। এরপর থেকে শান্তি কমিটি, রাজাকার – আলবদর ও অবাঙালিদের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের শনাক্ত করে নিয়মিত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। আকালু হত্যার পর ক্ষেত্রলাল সাহার স্ত্রী নাট্যকর্মী বালা সাহাকে হত্যা করা হয়। একইদিন অবাঙালি বিহারিরা পারনওগাঁ পূর্বপাড়ায় ৫ জন এবং মধ্যপাড়ায় একই পরিবারের ৫ জনকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে। ২৪শে এপ্রিল নওগাঁ স্টেডিয়াম মাঠের পূর্ব-উত্তর কোণে অবস্থিত ম্যালেরিয়া অফিসের নিকটবর্তী কদম গাছের নিচে পাকসেনা ও অবাঙালিরা মন্টু (পিতা অছির চেয়ারম্যান), আব্দুল বারী ও মজিবর রহমানকে হত্যা করে। ২৫শে এপ্রিল পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হামলায় শহীদ হন মরু মণ্ডল (কুমুরিয়া), জাফরাবাদ গ্রামের আকালু মণ্ডল, ফয়েজ মণ্ডল ও আলী মণ্ডল। ৩০শে এপ্রিল ৩ জন অবাঙালি যথা সোবহান বিহারি, রসগুল্লি ও সালাউদ্দিন বোয়ালিয়ার মির্জা দীন মোহাম্মদকে ধরে নিয়ে পারনওগাঁ মধ্যপাড়ায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। মে মাসে হানাদার বাহিনী বাঙ্গাবাড়ীয়া এলাকায় রিকশা শ্রমিক ফরিদ উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করে। ২০শে আগস্ট মহকুমা ন্যাপের যুগ্ম। সম্পাদক, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক এডভোকেট আবদুল জব্বারকে ধামুইরহাট থানার ফার্সিপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে তারা পারনওগাঁ মধ্যপাড়ায় চক এনায়েতপুর মহল্লার আছির উদ্দিন ও পুলিশ সদস্য হাসেম কাজীর স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করে। নভেম্বর মাসে জাফরাবাদ গ্রামের পাঁচ ব্যক্তিকে পাকবাহিনী হত্যা করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তারা সুলতানপুর, পাঠশালা এবং শেখপুরায় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষকে হতাহত করে। এর পাশাপাশি পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা কুমুরিয়া, জাফরাবাদ, লনপুর, মোহনপুর, হাঁপানিয়া, একডালা, দোগাছি, গড়েরহাট, ফতেপুর, মাধাইমুরি, ধামকুড়ি, পারবোয়ালিয়া, খাগরকুড়ি প্রভৃতি গ্রামে লুণ্ঠন, নারীনির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা এ উপজেলায় পাঁচটি গণহত্যা সংঘটিত হয়। ২২শে এপ্রিল সংঘটিত হয় ধামকুড়ি গণহত্যা। এতে একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ৭ জন গ্রামবাসী শহীদ এবং পুলিশ কর্মকর্তা সামসুদ্দিন সরদারের পুত্র সালাউদ্দিন মিন্টু (১০) আহত হন। ২৫শে এপ্রিল সংঘটিত হয় তরফদার পাড়া গণহত্যা। এতে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৬ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত ফতেপুর গণহত্যায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম থেকে ধরে আনা ১২ জন যুবক শহীদ হন। একই মাসে সংঘটিত দোগাছী গণহত্যায় গ্রামের ৫২ জন নিরীহ নারী-পুরুষ শহীদ হন। ৭ই নভেম্বর খাগরকুড়ি গণহত্যায় ৩২ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
লর্ড লিটন সেতুর পূর্বদিকে নওগাঁ বাজারে অবস্থিত ভবানী ভবন নামক দ্বিতল বাড়িটি পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
নওগাঁ সদর উপজেলায় একটি বধ্যভূমি ও দুটি গণকবর রয়েছে – পারবোয়ালিয়া ও পারনওগাঁ পূর্বপাড়া বধ্যভূমি দোগাছী গণকবর ও খাগরকুড়ি গণকবর।
নওগাঁ সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর কয়েকটি যুদ্ধ হয়। ৭ই অক্টোবর জামালগঞ্জ ও রণহার গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয়। এতে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন কমান্ডার ফরমুজুল হক পান্না।
৭ই নভেম্বর পারবোয়ালিয়ায় হামলার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাকসেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্ব সংঘটিত এ-যুদ্ধে পাকসেনারা পরাজিত এবং কয়েকজন রাজাকার ও একজন পাকমিলিশিয়া নিহত হয়। পাকসেনারা এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এদিনই পার্শ্ববর্তী খাগরকুড়ি গ্রামে গণহত্যা চালায়।
১৪ই ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন থানা আক্রমণ শুরু করলে পাকবাহিনী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নওগায় এসে একত্রিত হয়। ১৫ই নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল জলিল এবং সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান নওগাঁ সদর হানাদারমুক্ত করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন দল নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসর হলে ১৮ই ডিসেম্বর পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে এবং এদিনই নওগাঁ সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। অর্থাৎ, ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হলেও নওগাঁ সদর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয় তার দুদিন পরে।
নওগাঁ সদর উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আজিজুর রহমান (পিতা রিয়াজ উদ্দিন, দেওয়ান গ্রাম, মোক্তার পাড়া, বক্তারপুর), আব্দুর রহমান (পিতা রিপন সরদার, বর্ষাইল), বাগের আলী (পিতা ফরতুল সরদার, বক্তারপুর), মোস্তফা কামাল (পিতা লফিজ উদ্দিন কামাল, উলিপুর), সৈয়দ আলী (পিতা আছির মণ্ডল, তাজনগর, তিলকপুর), মতিউল ইসলাম (পিতা আশাদুল ইসলাম, উকিলপাড়া, পৌরসভা), লুৎফর রহমান (পিতা হাজী রমজান আলী, গাংজোয়ান, চন্ডিপুর), এছহাক আলী (পিতা জমিন উদ্দিন খাঁ, পারবাঁকাপুর, শৈলগাছী), সামাদ (পিতা মো. আহাদ আলী, হাপানিয়া), আফজাল হোসেন (পিতা আব্দুর করিম ফকির, বোয়ালিয়া, ৭নং ওয়ার্ড), আব্দুল জব্বার (পিতা আহমদ আলী সরদার, বক্তারপুর), নজরুল ইসলাম (পিতা মো. বছির উদ্দিন সরদার, ধামকুড়ি, বোয়ালিয়া, ২নং ওয়ার্ড), নবিবুর রহমান (পিতা মো. আয়েন সরদার, নামা নূরপুর, তিলকপুর), আব্দুল খালেক (পিতা জরিপ সরদার, দেবীপুর, তিলকপুর), নূরন্নবী (পিতা কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন, কাজীপাড়া), আব্দুল্লাহ আল মামুন (পিতা ডা. নজরুল ইসলাম, উকিলপাড়া), মোসলেম উদ্দিন (তাজনগর, তিলকপুর) এবং নঈম উদ্দিন আহম্মদ (পিতা শুকুর আলী, পারনওগাঁ; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মোজাফফর ন্যাপ নেতা)। নওগাঁ সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে লর্ড লিটন সেতুর পশ্চিম পাশে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। তাজ সিনেমার মোড় থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ নঈম উদ্দিন সড়ক। পৌর বাজারের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ মামুন মার্কেট। মুক্তি সিনেমার মোড় থেকে চক এনায়েতপুর পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ মামুন সড়ক। কাচাবাজার সংলগ্ন সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ নাজমুল হক সড়ক। [আইয়ুব হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!