নওয়াপাড়া বাজার গণহত্যা (অভয়নগর, যশোর)
নওয়াপাড়া বাজার গণহত্যা (অভয়নগর, যশোর) সংঘটিত হয় ২৭শে মার্চ। আওয়ামী লীগ নেতা নজিবর রহমান ও শ্রমিকনেতা বাবর আলী বিশ্বাসসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা এ গণহত্যায় প্রাণ হারান। এদিন পাকসেনারা বাজারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এখানেও তারা আরো ৮ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
৭১-এর মার্চের শুরুতে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে। স্বাধীনতাকামী মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করে। শাহ হাদিউজ্জামান এমপিএ ও আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি কর্নেল শওকত আলীর (পরে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার) নেতৃত্বে জয়বাংলা সশস্ত্র রেজিমেন্ট গঠিত হয়। ৭ই মার্চ উপজেলার নওয়াপাড়া শংকরপাশা হাইস্কুল মাঠে জয়বাংলা সশস্ত্র রেজিমেন্ট-এর ডাকে হাজার-হাজার লোকের এক বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ঘোষণা অভয়নগরের মানুষের কাছে ৮ই মার্চ পৌঁছায়। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ এ ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়। ১৪ই মার্চ নওয়াপাড়া বাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে হাজার-হাজার মানুষের উপস্থিতিতে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদ আলী ফারাজী পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে দেন।
২৭শে মার্চ সকালে রেলশ্রমিক ও স্বতঃস্ফূর্ত জনতা যশোর- খুলনা মহাসড়কে বড়বড় কাঠের গুঁড়ি ও গাছ ফেলে ফেলে রাখে। অভয়নগরের ভাঙ্গাগেট ও বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস সংলগ্ন রেলক্রসিং-এ বাধপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষুব্ধ পাকসেনারা রেলস্টেশনে ঢুকে ৯ জন রেলকর্মীকে হত্যা করে (দেখুন <নওয়াপাড়া রেলস্টেশন গণহত্যা)। এরপর তারা নওয়াপাড়া বাজারে গিয়ে ৮ জনকে গুলি করে হত্যা করে। বাজারে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি হানাদারদের বাধা দিতে গিয়ে তাদের গুলিতে থানা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নজিবর রহমান এবং কার্পেটিং জুট মিলস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বাবর আলী বিশ্বাসসহ ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা নির্মমভাবে নিহত হন। নওয়াপাড়া বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর মোল্যা তাদের ওপর অতর্কিতে গুলিবর্ষণ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাকসেনারা বাজারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় তারা সাবা প্রেস পুড়িয়ে দেয় এবং নওয়াপাড়া টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখলে নেয়। [মাসুদ আলম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড