নওয়াপাড়া রেলস্টেশন গণহত্যা (অভয়নগর, যশোর)
নওয়াপাড়া রেলস্টেশন গণহত্যা (অভয়নগর, যশোর) ২৭শে মার্চ সকালে সংঘটিত হয়। এতে রেলের ৯ জন গার্ড, টিকেট চেকার ও কর্মী নিহত হন। নিহতদের পরে স্টেশনের পূর্ব পাশে গণকবর দেয়া হয়।
২৭শে মার্চ সকালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৭ ট্রাক ভর্তি পাকসেনা যশোর-খুলনা মহাসড়ক ধরে অভয়নগরের ওপর দিয়ে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। অভয়নগরে পাকসেনাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পূর্বাচল জুটমিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে কয়েকশ মানুষ রেল কর্মচারীদের সহায়তায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপজেলার ভাঙ্গাগেট ও বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস সংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে রেলের ওয়াগন ও ইঞ্জিন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তারা ভাঙ্গাগেট থেকে বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস সংলগ্ন রেলক্রসিং পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে বড়বড় কাঠের গুঁড়ি ফেলে রাখে। সকাল ১০টার দিকে পাকসেনারা ভাঙ্গাগেটে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেয়ায় নেতৃত্ব দেয়ায় তারা মো. কামরুজ্জামানকে বেদম প্রহার করে। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে লোকজনকে ধরে এনে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। সকাল ১১টার দিকে ভাঙ্গাগেট ও বেঙ্গল টেক্সটাইলস সংলগ্ন রেলক্রসিং পার হয়ে পাকসেনারা নওয়াপাড়া রেলস্টেশনে প্রবেশ করে। রেলের ওয়াগন ও ইঞ্জিন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় রেলস্টেশনে ঢুকেই পাকসেনারা ৯ জন রেলকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন সকালে রেলের কর্মচারী বনবিহরী সিংহের কক্ষে ছিল রুস্তম আলী সর্দার (গার্ড, ২৮ ডাউন এক্সপ্রেস), এম এম হক (গার্ড, ৬৪ ডাউন প্যাসেঞ্জার), সালেহ আহমেদ, নওয়াব আলী (চেকার), আইনুল হক (পোর্টার), ইমান আলী (পয়েন্টম্যান), আব্দুল ওদুদ (পয়েন্টম্যান), নবু শেখ (গ্যাংসেট) ও শামছু (খালাসি)। সবাই ডিউটিরত অবস্থায় স্টেশনে ছিলেন। হঠাৎ একদল পাকসেনা স্টেশনের ঐ কক্ষে প্রবেশ করে রুস্তম আলী সর্দার ও নওয়াব আলীকে গুলি করে হত্যা করে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তারা সালেহ আহমদ ও এস এম হককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এদিন ওয়াচম্যান আতর আলীসহ আরো ৫ জন স্টেশনে পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে প্রাণ হারান। মৃতদেহগুলো ৪-৫ দিন পড়ে থাকায় পচে যায়। পরে রেলস্টেশনের পূর্বপাশে সবাইকে গণকবর দেয়া হয়। নওয়াপাড়া রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৮শে নভেম্বর রেলস্টেশনের পূর্বপাশ থেকে গণকবরটি স্মৃতিসৌধের পাশে স্থানান্তরিত হয়। [মাসুদ আলম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড