নকলা বাজার যুদ্ধ (নকলা, শেরপুর)
নকলা বাজার যুদ্ধ (নকলা, শেরপুর) সংঘটিত হয় ১লা ও ২রা অক্টোবর। এতে ১০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
শেরপুর জেলার অন্তর্গত নকলা উপজেলার একটি বাজার নকলা। ২৮শে সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা এ বাজারে রাজাকারদের অবস্থানের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। কোম্পানি কমান্ডার মুনসেফ আলীর নেতৃত্বে ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সীমান্ত পার হয়ে ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে বাংলাদেশের ভেতরে নালিতাবাড়ির কাওয়াকুড়ি গ্রামে পৌছান। সেখানে কিছু সময় অবস্থানের পর শেষরাত আনুমানিক ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তারাকান্দা গ্রামের আবু ইউসুফ মৌলভীর বাড়িতে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন রাত ১০টার দিকে তারা নকলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। রাত ১টা ৩০ মিনিটে নকলা বাজার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গড়েরগাঁও গ্রাম, ফেরুসা গ্রাম এবং বাদাগৈড় বিলের পাশে সুবর্নখালী খালের উত্তরপাড়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে রাজাকারদের অবস্থান ছিল সুবর্নখালী ব্রিজ এবং বলেশ্বর ব্রিজে। মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে তিন অবস্থান থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করলে রাজাকাররা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে পাকবাহিনীর ক্যাম্প নকলা হাইস্কুলে চলে যায়। এই ফাঁকে ব্রিজ দুটি দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা দুই ইঞ্চি মর্টার দিয়ে নকলা বাজারে আক্রমণ করেন। এতে ৬ জন রাজাকার হতাহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা হাইস্কুল ক্যাম্প লক্ষ করে আক্রমণ শুরু করলে পাকসেনা ও রাজাকাররা ক্যাম্প ছেড়ে অর্ধকিলোমিটার দূরে বাদাগৈড় গ্রামে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এদিকে ভোর হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা বারইকান্দির খারজান গ্রামে গিয়ে পুনরায় নকলা বাজার আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ইতিমধ্যে শেরপুর সদর থেকে আরো এক ট্রাক রাজাকার নকলায় আসে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ৯টায় মুক্তিযোদ্ধারা আবার নকলা বাজার আক্রমণের জন্য অবস্থান নেন। পূর্বদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি দলও সেখানে এসে অবস্থান নেয়। রাত ১২টার সময় মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকে আক্রমণ শুরু করেন। এ অপারেশনে ৪ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং বাকিরা টিকতে না পেরে পশ্চিমদিক দিয়ে পালিয়ে যায়। ইয়াদ আলী নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে শহীদ হন। [এ কে এম মহিদুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড