নকশি যুদ্ধ (ঝিনাইগাতী, শেরপুর)
নকশি যুদ্ধ (ঝিনাইগাতী, শেরপুর) সংঘটিত হয় ৩রা আগস্ট। এতে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরপক্ষে ৩৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এটি ছিল শেরপুর জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ।
নকশিতে পাকিস্তানিদের একটি বিওপি ছিল। ক্যাপ্টেন -আমিন আহমদ চৌধুরী, বীর বিক্রম-এর নেতৃত্বে নকশি বিওপি-তে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। আমিন আহমদ চৌধুরী তখন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘এ’ কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। এ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার (সিও) ছিলেন মেজর এ জেড এম আমিনুল হক। আমিন আহমদ চৌধুরী ৩রা আগস্ট দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে এ আক্রমণ পরিচালনা করেন।
নকশি বিওপি-তে পাকিস্তানিদের প্রায় এক কোম্পানি প্রশিক্ষিত সেনা মোতায়েন ছিল। আক্রমণের পূর্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কয়েকদিন বিওপি এলাকা রেকি করে যুদ্ধের ছক তৈরি করেন। পাহাড়ি অঞ্চল নকশি বিওপি-তে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা বালির বস্তা দিয়ে বাংকার তৈরি করেন।
৩রা আগস্ট রাত ৩টায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ শুরু করেন। প্রথমে আর্টিলারি বাহিনী গোলাবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনীর আর্টিলারির স্থানে আঘাত হানে। তাদের আঘাতের ফলে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এ অবস্থায় শত্রুরা তাদের আক্রমণ তীব্রতর করে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’-সহ বিভিন্ন স্লোগান সহকারে প্রবলভাবে আক্রমণ চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানিরা আকাশ পথে বোমা হামলা করে। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একটি শেলের আঘাতে আমিন আহমদ চৌধুরী মারাত্মকভাবে আহত হন। এ পর্যায়ে যুদ্ধের চেইন অব কমান্ড নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
এ-যুদ্ধে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরদিকে ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হাবিলদার নাছির উদ্দিন, ল্যান্স নায়েক আবুল কাশেম, ল্যান্স নায়েক ইউছুফ মিয়া, নায়েক আব্দুস সালাম, নায়েক সৈয়দ ফুল মিয়া, সতর উদ্দিন, হায়েত আলী, আব্দুল কুদ্দুস, রবিউল আলম, সিপাহি মোহাম্মদ আলী, সিরাজুল হক, হুমায়ুন কবীর, শামসুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার, ফয়েজ আহমদ, আবদুস সালাম, মো. হানিফ, আব্দুস সালাম, আব্দুস সামাদ, জামাল হোসেন, আবু ইসমাইল, সাজাহান আলী ও মনছুর আলী। এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশের মাত্র ৭ দিনের প্রশিক্ষণ ছিল। প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে মাত্র ২০ জন ইপিআর আর পুলিশের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। অন্যদিকে পাকিস্তানিরা এক কোম্পানি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য দিয়ে নকশি বিওপি প্রায় দুর্গের মতো নির্মাণ করেছিল। [এ এস এম শরিফুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড