ধোপাখোলা গণহত্যা (যশোর সদর)
ধোপাখোলা গণহত্যা (যশোর সদর) সংঘটিত হয় ৭ই মে। এতে ৩০ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
যশোর সদর উপজেলা থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার পথে তপসিডাঙ্গা আর মালঞ্চি গ্রাম। এরপর ধানক্ষেত। ধানক্ষেত পেরিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ধোপাখোলা গ্রাম। এখানে ৩০ জন শহীদের একটি স্মৃতিফলক রয়েছে।
পাকসেনারা ৩রা এপ্রিল যশোর সেনানিবাস থেকে বের হয়ে যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জনপদে বাঙালিদের ঘরবাড়ি পোড়াতে থাকে, আর সামনে নারী-পুরুষ যাকে পেয়েছে তাকেই গুলি করে হত্যা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় হানাদার বাহিনী বিহারি ও মিলিশিয়াদের নিয়ে প্রায়ই ধোপাখোলা গ্রামে গিয়ে অত্যাচার করত। তারা সেখানে ঘরবাড়ি লুট করত এবং লুট শেষে বাড়িঘরে আগুন দিত।
৬ই মে ৪ জন মিলিশিয়া অস্ত্রসহ ধোপাখোলা গ্রামে যায়। তবে গ্রামবাসী আগেই তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তাই সেদিন তারা ৪ জন মিলিশিয়াকেই আটক করে গণপিটুনি দেয়। এতে একজন মিলিশিয়া ঘটনাস্থলে নিহত হয়। মিলিশিয়া হত্যার ঘটনায় পাকবাহিনী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়। তাই পরের দিন ৭ই মে খুব ভোরে তারা স্থানীয় বিহারিদের নিয়ে ধোপাখোলা গ্রামে প্রবেশ করে। গ্রামবাসীদের কাছে দেশীয় অস্ত্র ছাড়া আধুনিক কোনো অস্ত্র ছিল না। তাই তারা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যেতে শুরু করে। এ সুযোগে হানাদার বাহিনী গ্রামবাসীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। তারা পাশবিক উল্লাসে যাকে যেখানে পেয়েছে তাকে সেখানেই হত্যা করেছে। এদিন মোট ৩০ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন।
ধোপাখোলা গণহত্যায় শহীদরা হলেন- নজরুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, খলিলুর রহমান, ডাক্তার আবদুস সাত্তার, আবদুর রশিদ, আবদুল আজিজ, সলেমান বিশ্বাস, জিন্নাত আলি, মফেজ বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আবু বকর, খোরশেদ বিশ্বাস, রবিউল ইসলাম, মফেজ সরদার, ইশারত আলি, মহসিন আলি, রওশন আলি, মতিউল্লাহ মিয়া, লুৎফর রহমান মিয়া, ওয়াজেদ আলি, হাশেম আলি মিয়া, জাকিয়া বেগম, আক্কাস আলি, আবদুর রব মিয়া, হোসেন আহমদ মিয়া, গৌর গাঙ্গুলী, মকলেসুর রহমান, মকসেদ ধোনি এবং অজ্ঞাতনামা দুজন। [মহসিন হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড