You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.07 | ধোবড়া যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

ধোবড়া যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

ধোবড়া যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৭ই নভেম্বর, ১৯শে নভেম্বর, ২০শে নভেম্বর, ২৫শে নভেম্বর ও ৩০শে নভেম্বর পাঁচবার। এর কারণ, শিবগঞ্জ উপজেলার এ এলাকায় পাকবাহিনীর অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ক্যাম্প ছিল। এলাকাটি ছিল পাকবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উভয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধারা ৭ই নভেম্বর রাতে প্রথম ধোবড়া ক্যাম্প আক্রমণ করেন। সূর্যোদয় পর্যন্ত উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এরপর কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন। ১৯শে নভেম্বর তিন প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা রাত ১২টায় দ্বিতীয়বার আক্রমণ করেন। এ-যুদ্ধে দুজন পাকসেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং চারজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও তিনজন আহত হন। ২০শে নভেম্বর ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, বীর বিক্রম-, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ- এবং লে. আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে তিন দল মুক্তিযোদ্ধা তৃতীয়বার আক্রমণ পরিচালনা করেন। লে. আওয়ালের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বালিয়াদিঘি থেকে ধোবড়ার নিকট পৌঁছায়। তারপর লে. আওয়াল তাঁর দল নিয়ে রাস্তার পূর্বদিক দিয়ে এবং ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাঁর দল নিয়ে নামো ধোবড়া দিয়ে এগুতে থাকেন। ক্যাপ্টেন গিয়াস তাঁর দল নিয়ে রাস্তা ধরে অগ্রসর হন। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর পাকসেনারা তিনদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলে বৃষ্টির মতো গুলি করতে থাকে। এদিন মরণপণ যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধারা সফল হতে পারেননি। এ-যুদ্ধে ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের ১২ জনের লাশ বালিয়াদিঘি গণকবরএ দাফন করা হয়। শাহাপুর গড় দখল করে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর বালিয়াদিঘি সাব- সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে ফিরে এসে ২৫শে নভেম্বর চতুর্থবার আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং তিন প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ধোবড়া ক্যাম্প আক্রমণ করেন। ঘণ্টাখানেক যুদ্ধ করার পর ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তাঁর বাহিনী নিয়ে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হন। এ-যুদ্ধে প্লাটুন কমান্ডার ইসমাইল আহত হন। ৩০শে নভেম্বর পঞ্চম বারের যুদ্ধের আগে তামিজ উদ্দীন তাঁর প্লাটুনের ১১ জন যোদ্ধা নিয়ে শাহবাজপুর নলডুবরি হাটের কাছে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান করেন। এখান থেকে তাঁরা সন্ন্যাসী ও উপর কয়লা গ্রামের মধ্যখানে জলার ধারে পৌঁছান। প্রত্যেক দলই যথাসময়ে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায় এবং কমান্ডারদের নির্দেশ পাওয়ামাত্র সমন্বিতভাবে আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু এবারেও মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান ব্যর্থ হয়। পরের দিন সকালে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চাদপসরণ করেন। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড