ধামুরা বাজার গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল)
ধামুরা বাজার গণহত্যা (উজিরপুর, বরিশাল) সংঘটিত হয় ৮ই মে। এতে শতাধিক সাধারণ মানুষ শহীদ হন। উজিরপুর সদর থেকে প্রায় ১০ কিমি উত্তর-পশ্চিম দিকে খরস্রোতা খালের পাশে ধামুরা বাজারের অবস্থান। হিন্দু- মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। ৮ই মে ভোররাতে গানবোটে করে পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা এসে ধামুরা বাজার আক্রমণ করে। তারা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক হিরু মিয়াকে কুণ্ডু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে বললে তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। সঙ্গে-সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা কুণ্ডু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা বাজারের জনপ্রিয় হরেন ডাক্তারকে খুঁজতে থাকে। তিনি তখন বাসা থেকে বের হয়ে নিজের পরিচয় দিলে হানাদার বাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় তারা ধামুরা বাজারে প্রবেশ করে অধিকাংশ দোকানে লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে। বাজারে ঘুমন্ত শতাধিক মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্নিসংযোগে শহীদ হন। ধামুরা বাজারের ১৫ জন শহীদের পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন- হিরু মিয়া (৪৫) (পিতা আবদুর হামেদ মিয়া, ধামুরা), হরেন চন্দ্র ডাক্তার (৬০) (পিতা বিপিন চন্দ্ৰ দে, ধামুরা বন্দর), আবদুল খালেক (৪৫) (পিতা জেন্নাত আলী, বড়াকোঠা), দলিলউদ্দীন মোল্লা (৩৫) (পিতা নাজেম মোল্লা, পূর্ব ধামুরা), করিম মোল্লা (২৫) (পিতা সিরাজউদ্দিন মোল্লা, পূর্ব ধামুরা), লুতু শরীফ (২৫) (পিতা আফসার হোসেন, নাঠৈ, আগৈলঝাড়া), সফিজউদ্দিন (২৫) (পিতা গফুর ফকির, ধামুরা), গেরদে আলী (২২) (পিতা গফুর ফকির, ধামুরা), শাহজাহান শিকদার (২৮) (পিতা গোলাম আলী চৌকিদার, ধামুরা), ফজলু দেওয়ান (১৫) (পিতা সোবাহান দেওয়ান, ধামুরা), বাবু খাঁ (২৫) (পিতা নীল খাঁ, ধামুরা), মাজেদ আলী মৃধা (২৫) (পিতা এলেম উদ্দীন মৃধা, ধামুরা), বিজয় (২৮) (পিতা পেয়ারী মালী, রত্নপুর), আরজ আলী (৬০) (পিতা আবদুল আলী হাওলাদার, দক্ষিণ ধামুরা) ও আবদুস সালাম ঢালী (৬০) (পিতা মহব্বৎ আলী, দক্ষিণ ধামুরা)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড