ধানাইদহ ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (বড়াইগ্রাম, নাটোর)
ধানাইদহ ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (বড়াইগ্রাম, নাটোর) সংঘটিত হয় ১১ই এপ্রিল। এতে প্রতিরোধযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী শহীদ হন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নগরবাড়ি ঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকশী হয়ে ঈশ্বরদী পৌঁছায়। এরপর তাদের একটি গ্রুপ নাটোরের দিকে অগ্রসর হলে মুলাডুলি রেলক্রসিং-এ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ১১ই এপ্রিল মুলাডুলি রেলক্রসিং-এর প্রতিরোধ ভেঙ্গে তারা সেখান থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে ধানাইদহ ব্রিজের কাছাকাছি এসে অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী যাতে ধানাইদহ ব্রিজ অতিক্রম করে নাটোরের দিকে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য কয়েকদিন পূর্ব থেকেই বড়াইগ্রাম, লালপুর ও পাবনা জেলার উত্তরাঞ্চলের মানুষ ধানাইদহ ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। অতঃপর শতশত মানুষ দা, কুড়াল, খুন্তি, শাবল, বল্লম, ফলা, তীর-ধনুক ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র ও গাদা বন্দুক সংগ্রহ করে ধানাইদহ ব্রিজে হানাদারদের প্রতিরোধে অবস্থান নেয়। এলাকার মা-বোনেরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কেউ পানি, কেউ খিচুরি, রুটি, চিড়া, মুড়ি, গুড় ইত্যাদি সরবরাহ করে প্রতিরোধযোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়ান। ১১ই এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও প্রতিরোধযোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে বেশ কয়েকজন ইপিআর যোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পাকবাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে প্রতিরোযোদ্ধারা পিছু হটেন। এ-যুদ্ধে ইপিআর যোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন— আজহার মালিহা (পিতা জসিম উদ্দিন, মালিহা), আছির উদ্দিন সরকার (পিতা হাজী নূর মোহাম্মদ সরকার), মজনু মিয়া (পিতা রাখের আলী), আদুরী বিবি (স্বামী সাজদার রহমান), জহুরা খাতুন (স্বামী আহাদ আলী), আনজেরা খাতুন (পিতা আহাদ আলী), আছিয়া খাতুন (পিতা আহাদ আলী), রহমান আলী (পিতা কুবাদ আলী), কেরামত আলী (পিতা খাদেম আলী), রাশেদা বিবি (স্বামী কেরামত আলী), আবদুল হক (পিতা হাজী কসিম উদ্দিন), রাহাতন বিবি (স্বামী আছান উদ্দিন), জাফর উদ্দিন, সাজদার রহমান, আবু তালেব, কালা চাঁদ, মহির উদ্দিন ও নছিম উদ্দিন। শহীদরা সকলেই ধানাইদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড