You dont have javascript enabled! Please enable it!

ধলই যুদ্ধ (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার)

ধলই যুদ্ধ (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ২৮শে অক্টোবর। এ-যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর অনেকে নিহত হয় এবং ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। তবে হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ-সহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং অনেকে আহত হন।
২৫শে অক্টোবর জেড ফোর্স-প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম ধলাই সীমান্তের ওপারে কমলপুর সাব-সেক্টর ক্যাম্পে এসে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জিয়াউদ্দীনের সঙ্গে মিলে ধলই ফাঁড়ি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ২৬শে অক্টোবর মেজর জিয়া, ক্যাপ্টেন কাইয়ূম, ক্যাপ্টেন আব্দুন নূর, নায়েব সুবেদার আবুল হোসেন সুবেদার সাত্তার, হাবিলদার মকবুল, ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমান, সিপাহি হামিদুর রহমান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর জাট ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে ধলই যুদ্ধের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। পাকবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট, ১ কোম্পানি রাজাকার ও ১টি আর্টিলারি গ্রুপের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যুদ্ধ হয়।
ধলই সীমান্তের পেছনে ধলই ভ্যালি ক্লাবে পাকবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের ২ প্লাটুন সেনা ও ১ প্লাটুন রাজাকার নিয়ে একটি শক্ত অবস্থান ছিল। এখানে খুবই মজবুতভাবে তৈরি বাংকার ছিল এবং তারা ফাঁড়ির সামনে পাঞ্চী ও ভূমি মাইন স্থাপন করেছিল।
২৭শে অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা এ, বি ও ডি তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে ফাঁড়ির দিকে যাত্রা করেন। তিনটি দলে বিভক্ত কোম্পানির কমান্ডাররা ছিলেন যথাক্রমে ক্যাপ্টেন মাহবুব, ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দীন ও মেজর বজলুল গনি পাটওয়ারী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নেতৃত্বে মূল দল ধলই সীমান্ত ফাঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রাতে ঘন কুয়াশায় মূল টার্গেট ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না বলে ক্যাপ্টেন কাইয়ুম পেছন থেকে আর্টিলারির সহায়তা চান। অল্পক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় আর্টিলারি গ্রুপ পাক হানানাদর বাহিনীর শক্ত অবস্থানের ওপর বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করলে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। আর্টিলারি ফায়ারের আড়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের ৭ ও ৯ নং প্লাটুন যথাক্রমে নায়েব সুবেদার আবুল হাসেম ও সুবেদার সাত্তারের নেতৃত্বে শত্রুসেনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এ-সময় মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনের কারণে বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। তখন পাকসেনারা নতুন উদ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। শত্রুপক্ষের একটি এলএমজি-র কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগুতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় সিপাহি হামিদুর রহমান এলএমজি ধ্বংসের দায়িত্ব নিয়ে ক্রলিং করে এগিয়ে যান। পাকসেনারা হামিদুর রহমানকে দেখার আগেই তিনি তাদের বাংকার ও এলএমজি- র ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। এতে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অনেকে হতাহত হয়। গ্রেনেড হামলা করে শত্রুসেনাদের কাছ থেকে সহযোদ্ধাদের নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করে নিজে একেবারে সীমান্ত লাইন বরাবর পৌছার সময় পাকবাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন। অন্যদিকে কুরমা সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর অন্য দলটি ধলই ভ্যালি ক্লাবে অবস্থানরত পাকসেনাদের প্রতিরোধ করলে ধলই সীমান্ত ফাঁড়িতে বেঁচে থাকা পাকসেনারা স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এর ফলে সীমান্ত ফাঁড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলইয়ে, যেখান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান শাহাদতবরণ করেণ সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [মুজিবুর রহমান রঞ্জু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!