You dont have javascript enabled! Please enable it! ধলিয়া রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (ফেনী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

ধলিয়া রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (ফেনী সদর)

ধলিয়া রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (ফেনী সদর) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। এতে ক্যাম্পের রাজাকার ও মিলিশিয়ারা পালিয়ে যায় এবং তাদের ফেলে যাওয়া বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
ধলিয়া ইউনিয়ন বর্তমানে ফেনী সদর উপজেলার আওতাধীন ৮নং ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধলিয়া হাইস্কুলে একটি রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে এবং ক্যাম্পে তাদের মিলিশিয়া বাহিনীকে নিয়োজিত করে। ক্যাম্প স্থাপন করেই রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আশপাশের গ্রামের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ ও হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। তারা নারীধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত হয়। রাজাকার ও মিলিশিয়াদের অত্যাচার-নির্যাতনের খবর পেয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ছোট-ছোট কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পের আশেপাশে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে রাজাকারদের ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রাখেন। এর ফলে রাজাকাররা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ফেনীতে অবস্থিত পাকিস্তানি বাহিনীর নিকট সাহায্য চায়। তারা সামরিক ও আধাসামরিক মিলিশিয়া বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে ক্যাম্পে পাঠায়। এর ফলে ক্যাম্পের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আগের চেয়ে আরো বেশি অত্যাচারী হয়ে ওঠে। তারা ধলিয়া ইউনিয়নের গ্রামেগঞ্জে ও হাটে-ঘাটে সাধারণ মানুষদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধারা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এফএফ কমান্ডার আবদুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে ভারত থেকে আনা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গভীর রাতে গেরিলা পদ্ধতিতে ক্যাম্পের ওপর দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে ত্রিমুখী আক্রমণ পরিচালনা করেন। হানাদাররাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষে প্রায় ২ ঘণ্টা প্রচণ্ড গুলি বিনিময় হয়। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ভারত থেকে আরো বেশকিছু ভারী অস্ত্রশস্ত্র এসে পৌঁছায়। মুক্তিযোদ্ধারা সেগুলো প্রয়োগ করলে রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনী টিকতে না পেরে অস্ত্র ফেলে ক্যাম্পের উত্তর দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প দখল করে ১০টি চাইনিজ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ হস্তগত করেন। এ-যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়; এলাকার সাধারণ মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর হয়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড