You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর মুক্তিযোদ্ধা দৌলা মিয়া - সংগ্রামের নোটবুক

বীর মুক্তিযোদ্ধা দৌলা মিয়া

দৌলা মিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কুমিল্লা জেলার শালদা নদী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তেলিয়াপাড়া যুদ্ধের শুরুতে তিনি ৩ নং সেক্টরে যোগদান করেন এবং মনতলা যুদ্ধ-এ বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
মনতলা যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে লে. হেলাল মোরশেদের বাহিনী পাকসেনাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থা থেকে লে. মোরশেদকে বের করে আনার জন্য সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ক্যাপ্টেন মতিন এবং ক্যাপ্টেন ভূঁইয়ার অধীন সৈন্যদের নিয়ে তাঁর সহযোগিতায় কলকলিয়ার দিক থেকে শক্তিশালী আক্রমণ রচনা করেন। এ পর্যায়ে দৌলা মিয়া এককভাবে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি একটি এলএমজি নিয়ে তাঁর অবস্থান থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছিলেন। তাঁকে লক্ষ করে শত্রুরা মেশিনগানের গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে। দৌলা মিয়া নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে মেশিনগানের একটি গোলার আঘাতে তাঁর পা-দুটি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ অবস্থায় হামগুড়ি দিয়ে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে মেশিনগানের আর একটি গোলায় তাঁর পেটের নারিভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে পেট বেঁধে পুনরায় এলএমজি থেকে গুলি ছুড়তে খাকেন। গোলার আঘাতে মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও তিনি এলএমজি ছাড়েননি। অবিরাম গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এদিকে মুক্তিবাহিনীর বেপরোয়া আক্রমণে পাকবাহিনী পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। দৌলা মিয়ার অবিরাম গুলিবর্ষণের কারণেই এটা সম্ভব হয়।
পরিস্থিতি নিজেদের আয়ত্তে আসার পর কে এম সফিউল্লাহ দৌলা মিয়ার কাছে গিয়ে দেখেন যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় ডান হাত এলএমজি-র ওপর তিনি রেখে রক্তের মধ্যে পড়ে আছেন। তাঁর বাম হাত পেটের ওপর। পা-দুটি মারাত্মকভাবে আহত। এতবড় জখম নিয়েও তিনি গুলিবর্ষণ করে সহযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন এবং নিজের অবস্থান থেকে সরে যাননি। কে এম সফিউল্লাহ মুক্তিযোদ্ধা সাদেক ও আনিসের সহায়তায় তাঁকে এ অবস্থান থেকে সরিয়ে আনেন।
কে এম সফিউল্লাহকে দেখে দৌলা মিয়া ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে বলেন, ‘স্যার আমি আর বাঁচবো না। মুক্ত স্বদেশ দেখে যাওয়া আর সম্ভব হলো না। আমার রক্তমাখা শার্ট আপনি রেখে দেবেন এবং দেশ মুক্ত হলে তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে দেখিয়ে বলবেন, আমি তাঁর আদেশ পালন করেছি। আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আপনি আমার যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ দিয়েছেন।’ এই করুণ মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখে কে এম সফিইল্লাহ অভিভূত হয়ে পড়েন। তাঁর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। তিনি তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। গাড়িতে করে নিয়ে যাবার সময় দৌলা মিয়া কে এম সফিইল্লাহকে অনুরোধ করেন তাঁকে যেন বাংলাদেশের মাটিতে কবর দেয়া হয়।
চিকিৎসায় দৌলা মিয়া বেঁচে যান। চার মাস পর তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে তখনো তার বিশ্রাম দরকার। কিন্তু তিনি আবার যুদ্ধে যেতে চান। অগত্যা কে এম সফিউল্লাহ তাঁকে তাঁর সদর দফতরে রেখে দেন। দৌলা মিয়ার এ ঘটনা অন্যদেরকেও মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড