You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে ধনবাড়ি উপজেলা (টাঙ্গাইল)

ধনবাড়ি উপজেলা (টাঙ্গাইল) ১৯৭১ সালে ধনবাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানাধীন ছিল। ২০০০ সালে ধনবাড়ি থানা গঠিত হয় এবং ২০০৬ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ধনবাড়ির মানুষ খুবই রাজনীতি-সচেতন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এ উজ্জীবিত হয়ে ধনবাড়ির বীর জনতা, ছাত্র-যুবক, পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এর নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে ধনবাড়ি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
মার্চ মাসে প্রথমে ধনবাড়ির পাইস্কা হাইস্কুল ও পানকাতা হাইস্কুল মাঠে এবং পরে প্যারিআটা পি টি এস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাইস্কা হাইস্কুল মাঠে ডা. শেখ নিজামুল ইসলাম এমপিএ, পানকাতা হাইস্কুল মাঠে সুবেদার নজরুল ইসলাম ও মোবারক হোসেন মাস্টার এবং পি টি এস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গোলাম ছামদানী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন। মার্চের শেষদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান মধুপুর- ধনবাড়ির আকাশে টহল দিতে থাকলে পাইস্কা হাইস্কুল মাঠের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে প্যারিআটা পি টি এস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেশকিছু ছাত্র- যুবক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনীর আক্রমণের আশংকায় প্যারিআটা পি টি এস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে পানকাতা হাইস্কুল মাঠে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ছোট-ছোট দলে বিভক্ত হয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য ভারতে যান। প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহের পর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে আবার ধনবাড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় এসে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন।
ধনবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠকগণ হলেন- ডা. শেখ নিজামুল ইসলাম এমপিএ, কোম্পানি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক তোলা (বর্তমানে এমপি ও কৃষিমন্ত্রী), কাজী নুরুল ইসলাম প্রমূখ।
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে জামালপুর জেলার প্রবেশপথ ধনবাড়ি। জামালপুর জেলায় রয়েছে বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা। মধুপুর-জামালপুর সড়কের ওপর ধনবাড়ীর অবস্থান। এ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনী উভয় পক্ষের কাছে টাঙ্গাইল- জামালপুর সড়কের অপরিসীম গুরুত্ব ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জামালপুর ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ও সরবরাহ পথ অব্যাহত রাখার জন্য এ সড়কের ওপর দখল রাখা পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্যদিকে হানাদার বাহিনীকে এ রাস্তায় বাধা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়টি মুক্তিবাহিনীর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাটের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও এ সড়কের গুরুত্ব ছিল।
হানাদার পাকবাহিনী যাতে সহজে মধুপুর অতিক্রম করতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধারা মধুপুর ব্রিজ ধ্বংস করে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু পাকবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে মর্টার শেল ও কামানের গুলি ছুড়ে ধনবাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। তারা রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। ধনবাড়ির মুক্তিযোদ্ধারা ধনবাড়ি-জামালপুর সড়কের ওপর হাজরাবাড়ি ও বানিয়াজানে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন। কিন্তু হানাদার বাহিনী এপ্রিলে মুক্তিবাহিনীর এসব অবরোধ অতিক্রম করে ধনবাড়ি বাজার লুণ্ঠন করে ও পুড়িয়ে দিয়ে জামালপুরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
পাকিস্তানি বাহিনী এপ্রিলে ধনবাড়িতে অনুপ্রবেশ করে। তারা ধনবাড়ির আওতাধীন মধুপুর-জামালপুর সড়কের ওপর ধনবাড়ির দক্ষিণে চেরাভাঙ্গা সেতু ও উত্তরে কুইচামারা সেতুতে ক্যাম্প স্থাপন করে।
ধনবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের মধ্যে রাজাকার কমান্ডার দেওয়ান আবতাব উদ্দিন (মোটবাড়ি), ছলিম উদ্দীন মাস্টার (চালাস), আবদুল হাই মেম্বার (রূপশান্তি), রেজাউল (খাসপাড়া), তপছের আলী (নিয়ামতপুর) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় মুশুদ্দি, পানকাতা, কয়ড়া, প্যারিআটা, বর্ণিচন্দবাড়ি, দরিচন্দবাড়ি, চরপাড়া, নিয়ামতপুর, বানিয়াজান প্রভৃতি গ্রামে ব্যাপক লুণ্ঠন চালায় এবং পুড়িয়ে দেয়। তারা ধনবাড়ি উপজেলায় ২৪ জন সাধারণ মানুষ ও ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। ধনবাড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে নারীদের ধরে এনে মধুপুর ক্যাম্পে নির্যাতন করে। পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় ২৬শে জুলাই আরফান আলীর চায়ের দোকান থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বর্ণিপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মানিককে ধরে মধুপুর বন্দিশিবিরে নিয়ে যায়। তারা মানিকের শরীরের চামড়া কেটে লবণ মাখিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে। রাতের অন্ধকারে মানিক কোনোক্রমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। হানাদার বাহিনী কেন্দুয়ার সুরেন মেকারকে হত্যা করে। তারা পানকাতা গ্রামের আশরাফ আলী তালুকদার, রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, মাহমুদপুর গ্রামের হায়দার আলী তালুকদার, আমজাদ ফকির, দুদু ফকির, রওশান আরা, জামাল উদ্দিন, মকবুল হোসেন, মোবারক আলী, আনোয়ার হোসেন, ময়নাল হোসেন, তাহের বাঘা, গুল মাজম, ওসমান গণি, ওয়াদুদ ফকির ও আবদুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করে।
পাকবাহিনী মুশুদ্দি গ্রামের আব্দুর রহমান আকন্দ, আব্দুল গফুর, রুস্তম আলী ও কিসমত আলীকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের গুলিতে বান্দ্রা গ্রামের সলিম উদ্দিন শহীদ হন। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মুশুদ্দি পূর্বপাড়া গ্রামের আছর উদ্দিন, হাজি আহসান আলী, চরপাড়া গ্রামের সোহরাব, আব্দুর রহমান, গোলাপ মাস্টার ও লতিফ মাস্টারের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। মুশুদ্দি পূর্বপাড়ার হাসেম মাস্টার বাড়ি ও আরফান সরকারের বাড়িতে তারা লুণ্ঠন চালায়।
হানাদার বাহিনী বলিভদ্র ইউনিয়নের পানকাতা গ্রামের কাজিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, আব্দুল গণি, সিরাজ আলী, রুস্তম আলীসহ অনেকের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা ৫ জন নিরীহ মানুষকে পানকাতা হাইস্কুল মাঠে গুলি করে হত্যা করে। পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পানকাতা ঈদগাহ মাঠে ১৪ জন মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড পানকাতা গণহত্যা নামে পরিচিত। নিহতদের মধ্যে ৩ জনকে পানকাতা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ধনবাড়ির চেরাভাঙ্গা সেতু ও কুইচামারা সেতুর পাশে পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ছিল। তবে ধনবাড়ির অনেক নারী- -পুরুষকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা মধুপুর বন্দিশিবিরে এনে নির্যাতন করে। পানকাতা গ্রামে একটি গণকবর আছে। ধনবাড়ি উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি যুদ্ধ হয়। সেগুলো হলো- দরিচন্দ বাড়ির যুদ্ধ, কয়ড়া- চরপাড়ার যুদ্ধ ও পানকাতার দ্বিতীয় যুদ্ধ। আগস্ট মাসে দরিচন্দ বাড়িতে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। পাকবাহিনীর একটি দল ধনবাড়ি থেকে কেন্দুয়া যাওয়ার সময় দরিচন্দ বাড়িতে পৌঁছামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালান। আক্রান্ত পাকসেনারা পাল্টা গুলি করে। এক পর্যায়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোম্পানি কমান্ডার আনিসুর রহমান।
২২শে সেপ্টেম্বর কয়ড়া-চরপাড়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কয়ড়া- চরপাড়া ধনবাড়ি সদর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণে ধনবাড়ি-পিংনা সড়কের পাশে অবস্থিত। এলাকার ছাত্র-যুবকরা স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ শেষে ধনবাড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন এবং পাকবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। ধনবাড়ি-জামালপুর-কামালপুর ও পার্শ্ববর্তী সীমান্ত এলাকাগুলো থেকে মুক্তিবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকবাহিনী সেনা মোতায়েন করে। ধনবাড়ি থেকে জগন্নাথগঞ্জ স্টিমার ঘাট ও নদীপথের সুবিধা থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা রসদ সরবরাহের জন্য এসব এলাকায় অবস্থান নেন। ধনবাড়ি-জামালপুর সড়কে ধনবাড়ির দক্ষিণে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ হাজরাবাড়ি সেতু ও ধনবাড়ির উত্তরে কুইচামারা সেতু উড়িয়ে দিয়ে শত্রুদের সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য ১১ নম্বর সেক্টরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব পড়ে কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গালের ওপর।
ব্রিজ ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয় বারুদ ও অন্যান্য অস্ত্র কেরামজানিতে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গরুর গাড়িতে বহন করে চড়পাড়া ও মুশুদ্দি পূর্বপাড়ার সীমান্তবর্তী স্থানে মাটির গর্ত করে পুঁতে রাখা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুদের গতিবিধির ওপর নজর রাখাসহ ২টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। একদল মুক্তিযোদ্ধা কয়ড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নেয়। অন্য দল চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং তৃতীয় দল পানকাতায় অবস্থান নেয়। পাকবাহিনী মধুপুর, গোপালপুর এবং ধনবাড়ির দুটি সেতুতে অবস্থান করছিল। তাদের সহযোগিতায় ছিল এলাকার রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্যরা। রাজাকার তপছের আলী মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্বন্ধে বার্তা পাঠায়। পাকবাহিনী ২২শে সেপ্টেম্বর ভোরে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈরান নদীর অপর পাড়ে কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীও হামলার জবাব দেয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর দুটি দল এ-যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী ধনবাড়ির দিকে পিছু হটে। তারা শক্তি বৃদ্ধি করে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়রা ঘাটের ফেরি নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে কৌশলগত কারণে পিছু হটেন। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম (পিতা আব্দুল হক সুতার, মুশুদ্দি পশ্চিমপাড়া) যুদ্ধে আহত হয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং পরে নির্যাতন শেষে হানাদারারা তাঁকে হত্যা করে। এখানকার যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়।
পানকাতার দ্বিতীয় যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৫শে সেপ্টেম্বর। ধনবাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গোপালপুর সড়কের পাশে পানকাতা গ্রামের অবস্থান। পানকাতা হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করতেন। ২৫শে সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী গোপালপুর থানা সদর থেকে পানকাতার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আক্রমণ করে। রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা গুলিবর্ষণ ও রাস্তার দুপাশের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে পানকাতা হাইস্কুলের দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। কোম্পানি কমান্ডার কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গালের নেতৃত্বে ১০৫ জন মুক্তিযোদ্ধা তিন ভাগে বিভক্ত হন। পানকাতা থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে ধনবাড়ী-ঝাওয়াইল-হাদিরা ত্রিমুখী রাস্তার পাশে ৭ জনের একটি দল অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা খসরু আনোয়ারের নেতৃত্বে অন্যরা অবস্থান নিয়ে পাকবাহিনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পাকবাহিনী শিমলা হয়ে মাহমুদপুর গ্রামে এসে হাতেম আলী তালুকদার এমএনএ-এর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা পানকাতা হাইস্কুলের দিকে অগ্রসর হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আওতায় আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা গুলি চালান। তারাও পাল্টা গুলি করে। পানকাতার এ-যুদ্ধ প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পরে কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক এক মেজর আহত হয়। অপরদিকে ১৯ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। ১০ই ডিসেম্বর ধনবাড়ি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
ধনবাড়ির ২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন— আব্দুস সালাম (পিতা আব্দুল হক, মুশুদ্দি) ও সুরুজ্জামান (পিতা জয়নাল আবেদীন, গণিপুর)। ধনবাড়ি উপজেলায় একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। [মো. গোলাম ছামদানী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৫ম খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!