দোহাজারী ব্রিজ বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)
দোহাজারী ব্রিজ বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী এলাকায় অবস্থিত। আরাকান সড়কস্থ শঙ্খ নদীর ওপর নির্মিত এ ব্রিজে এপ্রিলের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে পাকবাহিনী বাঙালি নিধন শুরু করে। ২২শে এপ্রিল দোহাজারী সিএন্ডবি অফিসে পাকবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপিত হওয়ার পর শঙ্খ নদীর দক্ষিণ পাড়ে ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে তাদের একটি চেকপোস্ট বসানো হয়। আরেকটি চেকপোস্ট বসানো হয় উত্তর পাড়ে ব্রিজের উত্তর প্রন্তের সঙ্গে সংযুক্ত বেইলি ব্রিজের উত্তর সীমাঘেঁষে আরাকান সড়কের পূর্বপাশে। উভয় চেকপোস্টে যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে চেক করা হতো। দক্ষিণ পাড়ের চেকপোস্টে কখনো অধিক যাত্রী নামানো হলে তাদের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের চরে (নবনির্মিত দোহাজারী হাইওয়ে থানা ভবনের উত্তর পাশে) নিয়ে চেক করা হতো। উভয় চেকপোস্ট এবং এই চরে যাত্রীদের চেক করে কাঙ্ক্ষিত লোকজন পাওয়া গেলে তাদের নির্যাতন করে ব্রিজে এনে হত্যা করা হতো। চেক করার সময় মহিলা পাওয়া গেলে তাদের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের পশ্চিম পাশে অবস্থিত কৃষি সেচ প্রকল্পের পরিত্যক্ত পাম্প মেশিন ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করার পর ব্রিজে এনে হত্যা করা হতো। হত্যার স্থান ছিল ব্রিজের দক্ষিণাংশ এবং ব্রিজের উত্তর প্রান্ত ও বেইলি ব্রিজের সংযোগস্থল। নানা অঞ্চল থেকে নিরীহ লোকজনদের ধরে এনেও এখানে হত্যা করা হতো। আগস্টের প্রথমার্ধে দক্ষিণ গাছবাড়িয়ার বাইন্যা (বণিক) পাড়ার কৃষ্ণপদ আচার্য (পিতা পণ্ডিত মনোমোহন আচার্য)-কে এখানে এনে গুলি করে হত্যা করা হয়। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এখানে এনে হত্যা করা হয় উত্তর হাশিমপুরের আউরগ্যা পাড়ার দুজনসহ মোট ৮ জনকে। আউরগ্যা পাড়ার দুজনের মধ্যে একজনের নাম আবদুশ শুক্কুর (পিতা গুনু মিয়া)। এঁদের যেসব রাজাকার ধরে আনে, তাদের মধ্যে আহমদ শফি ওরফে চেইঙ্গা ফইর (দোহাজারী), তাজুর মুলুক ওরফে মেজর তাজু (দোহাজারী), মাহফুজুর রহমান (ফুলতলা) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের মধ্যে ৬ জন নিরীহ লোককে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দোহাজারী ব্রিজে ধরে আনা হয়। তারা হলেন: মোহাম্মদ আলী সওদাগর (পিতা রকিম উদ্দিন, চৌধুরীপাড়া, পূর্ব চন্দনাইশ), ধীরেন্দ্রলাল দাশ (পিতা জগত্চন্দ্র দাশ, গুইল্যাছড়ি, দক্ষিণ কাঞ্চননগর), সুগন্ধি কুলাল (কুলালপাড়া, উত্তর জোয়ারা), ডা. জোছনা কুলাল (কুলালপাড়া, উত্তর জোয়ারা), সাধনচন্দ্র দাশ (দক্ষিণ কাঞ্চননগর) এবং অশ্বিনী দাশ (গুইল্যাছড়ি, দক্ষিণ কাঞ্চননগর)। তবে দক্ষিণ কাঞ্চননগরের পুতুন তালুকদার বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর (পিতা মো. রহিম বখসু)- এর চাপে পটিয়া থানা শান্তি কমিটির আহ্বায়ক খায়ের আহমদ চৌধুরী তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আবদুল গফুর খায়ের আহমদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন। ৬ই ডিসেম্বর লোহাগাড়ার চুনতি হিন্দুপাড়া থেকে ১১ জনকে ধরে এনে তাদের ১০ জনকে দোহাজারী ব্রিজে হত্যা করা হয়। অপরজনকে অমানুষিক নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়া হয়। এপ্রিলের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে বহুসংখ্যক বাঙালিকে হত্যা করা হয়। [শামসুল আরেফীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড