You dont have javascript enabled! Please enable it!

দোহাজারী রেলসেতু বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম)

দোহাজারী রেলসেতু বধ্যভূমি (চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু নিরপরাধ লোককে হত্যা করা হয়। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের শেষ গন্তব্যস্থল দোহাজারী রেলস্টেশন। ১৯৩৫ সালে এ রেলপথ নির্মিত হয়। তখন এখানকার সড়ক পথ ছিল অনুন্নত। দোহাজারী কৃষি ও বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দক্ষিণ চট্টগ্রামের কৃষি ও বনজ সম্পদ, ধান, কাঠ, বাঁশ প্রভৃতি দোহাজারী থেকে রেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। এ রেলপথে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি বিশাল কারখানা আছে। এখান থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি কাঠের স্লিপারের কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা হয়। চট্টগ্রাম- দোহাজারী রেলপথ সাতকানিয়া, লোহাগাড়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের প্রধান যাতায়াত পথ ছিল। এ পথে শঙ্খ নদীর ওপর একটি রেলসেতু রয়েছে। এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক পথের একটি সেতু।
২৭শে মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের দখল নেয়। এপ্রিল মাসের ১ম সপ্তাহে কালুরঘাট রেলসেতুর দখল নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বাঙালি সৈনিকদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেতুর দখল নেয়। ফলে গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রাম তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরপর তারা দোহাজারী শঙ্খ সেতুর দক্ষিণ তীরে (বিওসি মোড়) একটি স্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পে পাকবাহিনী ছাড়াও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী ও শান্তি কমিটি-র সদস্যরা অবস্থান করত। দোসরদের সহায়তায় তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারগামী বাস থামিয়ে যাত্রীদের মধ্য থেকে সন্দেহভাজন লোকদের বাস থেকে নামিয়ে দোহাজারী রেলসেতুর নিচে ‘লাইন করে দাঁড় করাত। এরপর তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের পর গুলি করে শঙ্খ নদীতে ফেল দিত। কখনো-কখনো লোকজনকে উলঙ্গ করে তাদের ধর্ম পরিচয় নিরূপণ করত। হিন্দুধর্মাবলম্বী হলে তাদের গুলি করে হত্যা করত। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাস এ রেলসেতুর নিচে পাকসেনারা বহু মানুষকে হত্যা করে। [উদয়ন নাগ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!