দোহার থানা যুদ্ধ (দোহার, ঢাকা)
দোহার থানা যুদ্ধ (দোহার, ঢাকা) ২৮শে নভেম্বর সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায় এবং দোহার উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
আগস্ট মাসে হানাদার বাহিনী দোহার থানায় তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৪শে নভেম্বর সন্ধ্যার পর উত্তর জয়পাড়া দেওয়ান বাড়ির সামনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিরাজউদ্দীন আহমেদ ওরফে সিরাজ মিয়া, মোহাম্মদ রজ্জব আলী মোল্লা, ডা. আবুল কালাম, ডা. আব্দুল আউয়াল, সেনাসদস্য কমান্ডার সাইদুর রহমান (চরভদ্রাসন, ফরিদপুর), গ্রুপ কমান্ডার হাওলাদার আলাউদ্দীনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দোহার থানায় পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণের জন্য এক জরুরি সভায় মিলিত হন এবং দোহার থানা পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পোদ্দারবাড়ি এবং নারিশা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা দুদিক থেকে থানা আক্রমণ করবেন। এ উদ্দেশ্যে রেকি সম্পন্ন করা হয়।
ইতোমধ্যে আশরাফ আলী চৌধুরী এমএনএ-র বোনকে পাকিস্তানি সৈন্যরা জয়পাড়া থেকে আটক করে দোহার থানায় নিয়ে যায়। তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য জয়পাড়ার জহির এবং দোহারের জলিল দোহার ক্যাম্পের বাঙালি মেজর তৌহিদের সঙ্গে কথা বলেন। মেজর তৌহিদ এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয়। এ উদ্দেশ্যে সে দোহার থেকে নটাখোলা আসে। সেখান থেকে তাকে গ্রুপ কমান্ডার হাওলাদার আলাউদ্দীন পালামগঞ্জ নায়েবের বাড়িতে অবস্থানরত কমান্ডার সিরাজউদ্দীন আহমেদ মিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিয়ে যান। মেজর তৌহিদ সারেন্ডার করার কথা জানায়। ইতোমধ্যে রাজাকার রমজান আলী মোল্লা ৮ ভাইসহ ৮টি রাইফেল ও ৮০০ গুলিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট সারেন্ডার করে। সিরাজউদ্দীন আহমেদ ২৮শে নভেম্বর সন্ধ্যায় দুদিক থেকে দোহার থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। থানার উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে পাকিস্তানি সেনাদের বাংকার। দোহার থানার দক্ষিণ দিক খোলা ছিল। কোনো বাড়িঘর ছিল না। এপথ ধরে পাকিস্তানি সেনারা দোহার থানা থেকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত। এদিকে ২৮শে নভেম্বর বেলা তিনটা নাগাদ দোহার থানায় অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার জন্য হানাদার বাহিনীর অপর একটি গ্রুপ লঞ্চযোগে পদ্মা নদীর পাড়ে এসে নেমে ক্যাম্পে আসে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮শে নভেম্বর দোহার থানা আক্রমণের জন্য সন্ধ্যার পর মোহাম্মদ রজ্জব আলী মোল্লা ও ডা. আবুল কালাম তাঁদের বাহিনী নিয়ে থানার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে অবস্থান নেন। সিরাজউদ্দীন আহমেদ, ডা. আব্দুল আউয়াল, কমান্ডার সাইদুর রহমান, গ্রুপ কমান্ডার হাওলাদার আলাউদ্দীন, সোহরাব উদ্দীন, বোরহান উদ্দীন ডাক্তার, মাসুম কন্ট্রাক্টর, বিল্লাহ হোসেন, আব্দুল হাকিম, হাবিবুর রহমান, আব্দুর রউফ মোল্লা, গ্রুপ কমান্ডার বায়েজীদ মীর, গ্রুপ কমান্ডার রুহুল আমীন খোন্দকার, লটাখোলার আইউব আলী, আব্দুল মান্নান খান প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে আক্রমণ চালান।
উভয় পক্ষের মধ্যে সারা রাত যুদ্ধ চলে। এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা করম আলী, নুরু ওরফে সাধু, কাশেম, দেলোয়ার হোসেন দুলু, আব্দুর রশীদ নটাখোলায় অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে শেষ রাতের দিকে পাকিস্তানি সৈন্যরা লঞ্চযোগে পালিয়ে যায়। অতঃপর মুক্তিযোদ্ধারা দোহার থানা দখল করেন এবং দোহার উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [রীতা ভৌমিক]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড