ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম দেলোয়ার হোসেন
দেলোয়ার হোসেন, বীর বিক্রম ল্যান্স নায়েক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের দড়িভেলানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি জায়েদ আলী এবং মাতার নাম মোসা. মাসুমা খাতুন।
দেলোয়ার হোসেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর- এ চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। ৭১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দুই মাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি কর্মস্থল পাকিস্তানে ফিরে না গিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। অল্প কিছুদিন পর দেলোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নেন। কিন্তু তাঁর মা কোনোভাবেই তাঁকে বিদায় দিতে রাজি ছিলেন না। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এক প্রকার জোর করেই মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি নিয়মিত বাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে কয়েকদিন অবস্থানের পর ১৮ জনের একটি দল গঠন করে দেলোয়ার হোসেনের ওপর এর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘হিট এন্ড রান’ পদ্ধতিতে গেরিলা যুদ্ধ করার জন্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। দেলোয়ার হোসেন তাঁর দল নিয়ে কিছুদিন কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। কুমিল্লা অঞ্চলে অবস্থান করা নিরাপদ মনে না হওয়ায় তাঁরা নোয়াখালীর মুক্ত অঞ্চলে চলে যান। মুক্ত এলাকায় অবস্থান করে তাঁরা হানাদার বাহিনীর ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করে পুনরায় নিরাপদ স্থানে চলে যেতেন।
জুলাই মাসে হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে দেলোয়ার হোসেন তাঁর দল নিয়ে চাঁদপুর জেলার মতলব চলে আসেন। এখানে অবস্থান করে তাঁরা হানাদারদের ওপর বৃহৎ পরিসরে আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে হানাদার বাহিনী এ খবর জানতে পারে। ১৭ই জুলাই পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। দেলোয়ার হোসেন সাহসিকতার সঙ্গে হানাদারদের মোকাবিলা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হানাদারদের গুলি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি শহীদ হন। সহযোদ্ধারা নৌকাযোগে মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে দেলোয়ার হোসেনের অসীম সাহস, বীরত্বপূর্ণ অবদান ও আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁর স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম। তাঁরা ছিলেন নিঃসন্তান। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড