দোয়ারিকা ফেরিঘাট যুদ্ধ (বাবুগঞ্জ, বরিশাল)
দোয়ারিকা ফেরিঘাট যুদ্ধ (বাবুগঞ্জ, বরিশাল) সংঘটিত হয় ৩রা ডিসেম্বর। এতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং একজন আহত হন।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দোয়ারিকা ফেরিঘাট মুক্তিযোদ্ধা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উভয়ের জন্যই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধারা ফেরি ধ্বংস করে হানাদার বাহিনীর চলাচল বিঘ্নিত করতেন। অপরদিকে হানাদাররা ফেরিঘাট সচল রেখে তাদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে চাইত।
২৫শে এপ্রিল বরিশাল শহর দখলের পর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় স্থানীয় রাজাকাররা দোয়ারিকা ফেরিঘাটের দুই পাড়ে ক্যাম্প স্থাপন করে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। জুলাই মাসের প্রথমদিকে কমান্ডার এডভোকেট আবুল কাশেম, আ. মজিদ খান, রত্তন আলী শরীফ, আব্দুল হাওলাদার, ইপিআর সদস্য মোতাহার প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দোয়ারিকা ফেরিঘাটের পশ্চিম পাড়ের রাজাকারদের ঘাঁটি আক্রমণ করে তাদের বহু অস্ত্র হস্তগত করেন। ২৭শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা দোয়ারিকা ঘাটের পূর্ব পাড়ের রাজাকারদের ঘাঁটি দখল করেন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্যাপ্টেন কাহারের নেতৃত্বে দোয়ারিকা ঘাটে ক্যাম্প স্থাপন করে। ক্যাম্প স্থাপনের পর তারা আশপাশের গ্রামগুলোতে অত্যাচার- নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করে। ৩রা ডিসেম্বর বেইজ কমান্ডার আ. মজিদ খান, মো. রত্তন আলী শরীফের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দোয়ারিকা ফেরিঘাট পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয় পক্ষের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আবুল হোসেন (মহিষাদী) ও আ. রশিদ (রাকুদিয়া) শহীদ হন এবং মো. রত্তন আলী শরীফ, বীর প্রতীক- আহত হন। বাবুগঞ্জ উপজেলাসহ বরিশাল জেলা থেকে হানাদার বাহিনী গোপনে রাতের অন্ধকারে ৮ই ডিসেম্বর পালিয়ে গেলেও ক্যাপ্টেন কাহারের নেতৃত্বে দোয়ারিকা ফেরিঘাট ক্যাম্পে তারা আটকা পড়ে। ১৯শে ডিসেম্বর নূরুল ইসলাম মঞ্জুর এমএনএ, ক্যাপ্টেন মাহফুজুল আলম বেগ, এডভোকেট আবুল কাশেম প্রমুখের নিকট হানাদারদের এ ক্যাম্পের ৪২ জন পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। [মনিরুজ্জামান শাহীন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড