দেবীদ্বার থানা আক্রমণ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা)
দেবীদ্বার থানা আক্রমণ (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) পরিচালিত হয় দুবার ২১শে মে এবং সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সমেয়। প্রথমবার ৬ জন পুলিশ নিহত হয়। দ্বিতীয়বার মুক্তিযোদ্ধারা সিও অফিসের দুটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন, ৩টি বাংলা ও ২টি ইংরেজি টাইপরাইটারসহ অন্যান্য মালামাল হস্তগত করেন। এগুলো পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
কুমিল্লা জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে দেবীদ্বার থানা (প্রতিষ্ঠিত ১৯১৫) অবস্থিত। কুমিল্লা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৮ কিমি। এ থানার উত্তর-পশ্চিমে মুরাদনগর, দক্ষিণে চান্দিনা, পূর্বে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা অবস্থিত। ১৯৮৩ সালে এ থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ থানার অন্তর্গত বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। পক্ষান্তরে যুদ্ধ শুরুর থেকেই এ এলাকার লোকজন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ডাকে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
মুক্তিযোদ্ধারা দুবার দেবীদ্বার থানা আক্রমণ করেন প্রথমবার ২১শে মে এবং দ্বিতীয়বার সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। প্রথমবার অভিযানে নেতৃত্বে দেন মুক্তিযোদ্ধা জামাল হোসেন ও খোকন চৌধুরী (ধামতী)। এ দুজন মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লার কাছে একটি এন্টিট্যাঙ্ক মাইন পুঁতে শত্রুবাহিনীর একটি ট্রাক উড়িয়ে দেন। গেরিলাদের আর একটি দল দেবীদ্বার থানা আক্রমণ করে পাকবাহিনীর অধীনস্থ ৬ জন পুলিশকে হত্যা করে। গেরিলাদের হাতে হাজীগঞ্জ থানার একজন সাব-ইন্সপেক্টরসহ ৩ জন পুলিশ নিহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে পাকবাহিনীর একটি দল (আনুমানিক ১০ জন সেনাসদস্য) হাজীগঞ্জ থানার পাহারায় নিযুক্ত হয়। গেরিলারা একদিন আক্রমণ চালিয়ে তাদের ৪ জনকে হত্যা করে।
দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনার নেতৃত্ব দেন কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান। এ অভিযান শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সিও অফিসের দুটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন, ৩টি বাংলা ও ২টি ইংরেজি টাইপরাইটারসহ অন্যান্য মালামাল হস্তগত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে দেবীদ্বার থানার ফাতেহাবাদ গ্রামের জমাদ্দার বাড়ি সংলগ্ন গভীর জঙ্গল এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ন্যাপ- প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের বাড়ি এলাহাবাদ গ্রামে দুটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবীদ্বার থানা থেকে সংগৃহীত সাইক্লোস্টাইল মেশিন ও টাইপরাইটারগুলো এ ক্যাম্পে প্রচারপত্র, চিঠি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আইডি কার্ড তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড