দেবীদ্বার সদর গণহত্যা (দেবীদ্বার, কুমিল্লা)
দেবীদ্বার সদর গণহত্যা (দেবীদ্বার, কুমিল্লা) সংঘটিত হয় ২৪শে মে। এতে ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে (বর্তমানে বাস স্ট্যান্ডের নিকট) একটি গণকবর আছে, যা দেবীদ্বার সদর গণকবর নামে পরিচিত। পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্বাক্ষর এ গণকবর। ১৯৭১ সালের ২৪শে মে পাকবাহিনী এখানে ১৯ জন যুবককে হত্যা করে একটি গর্তে গণকবর দেয়।
ঘটনার দিন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বাখরাবাদ ও দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামে এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে। এতে ১৪৭ জন নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়। এ ঘটনা বাখরাবাদ গণহত্যা নামে পরিচিত এদিন ভোর ৫টায় পাক হায়েনারা গ্রামদুটিতে প্রবেশ করে এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চালায়। তা দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে। লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নারীদের ধর্ষণ করা হয়। পাকসেনারা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় ২৩ জন যুবক ও কিশোরকে ধরে দেবীদ্বার উপজেলা সদর সেনা ক্যাম্পের দিকে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে দক্ষিণ বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ গোপাল শীলের পুত্র তারক শীল ও একই গ্রামের শহীদ মনমোহন সাহার পুত্র দুলাল চন্দ্র সাহা নামে দুই কিশোরকে হানাদাররা ছেড়ে দেয়। একজন যুবক আত্মরক্ষার জন্য সেনাদের গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পাকসেনারা অবশিষ্ট ২০ জনকে দেবীদ্বার সদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ঐদিন বিকেলে দেবীদ্বার উপজেলা সদরে ডাক বিভাগের দক্ষিণ পাশে এবং কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সামনে ২০ জন যুবককে দিয়ে বিশাল এক গর্ত খোঁড়ায়। পরে ঐ গর্তের পাশে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তারা ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করে। এ-সময় বাখরাবাদ গ্রামের শহীদ হরেন্দ্র চন্দ্র সাহার পুত্র হরেকৃষ্ণ সাহা নামে এক কিশোর (দশম শ্রেণির ছাত্র) ঘটনাক্রমে বেঁচে গেলে অবশিষ্ট ১৯ জনকে ঐ গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়। এ গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মরণে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিফলকটি কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের (বর্তমানে বাস স্ট্যান্ড) পাশে অবস্থিত। [নাহিদ মিয়া]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড