দুলালমুন্দিয়া যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ)
দুলালমুন্দিয়া যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) সংঘটিত হয় ১২ই এপ্রিল। কালীগঞ্জ থানা সদর থেকে প্রায় ২ কিমি দক্ষিণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার ফিরোজ খান (বরিশাল) এতে নেতৃত্ব দেন।
পূর্ব থেকেই বাঙালি সেনা, ইপিআর, আনসার, মুজাহিদ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী যশোর সেনানিবাসের দিকে মুখ করে বাংকার খুঁড়ে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে শক্ত অবস্থানে ছিল। ঘটনার দিন পাকিস্তানি সেনারা দক্ষিণ দিক থেকে মহাসড়ক ধরে অগ্রসর হয়ে দুলালমুন্দিয়ার পশ্চিম দিক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। তারা রাত ৮টার দিকে রেললাইন অতিক্রম করে পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তরে মোবারকগঞ্জ চিনিকল পেছনে রেখে তিনদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। ফলে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষিণ দিকের প্রতিরক্ষাব্যূহটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে যুদ্ধে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বদিক দিয়ে পিছু হটেন। এ-যুদ্ধে আনসার, ইপিআর, মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সাধারণ লোক প্রায় ৪০-৪৫ জন শহীদ হন। দুলালমুন্দিয়া রেল লাইনের পাশে ফরিদপুর জেলার আবদুল্লাহ ও কবির হোসেন নামে দুজন পথচারী শহীদ হন। অপরপক্ষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৫-২০ জন সৈন্য নিহত হয়। এ-যুদ্ধে পরাজয়ের পর আনসার কমান্ডার আবুল হোসেনসহ অনেকে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য ভারতে যান। ট্রেনিং শেষ করে তাঁরা পুনরায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটার পর পাকসেনারা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ২২ জন সাধারণ লোক এবং দুজন পথিককে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ ২২ জন হলেন- আব্দুল খালেক (পিতা জামাত আলী মণ্ডল, দুলালমুন্দিয়া), শহর আলী (পিতা আজিম ফকির, দুলালমুন্দিয়া), বাহার আলী বিশ্বাস (পিতা হাজের আলী বিশ্বাস, খামারমুন্দিয়া), নিমাই চন্দ্র পরামাণিক (পিতা কৃষ্ট চন্দ্র পরামাণিক, খামারমুন্দিয়া), রণজিৎ দাস ওরফে নুনু দাস (পিতা ফণীভূষণ দাস, খামারমুন্দিয়া), সলেমান (পিতা লাল মিয়া, খামারমুন্দিয়া), নাজের আলী মীর (পিতা ওসমান আলী, খামারমুন্দিয়া), নিমাই চন্দ্র বিশ্বাস (পিতা কৃষ্ণ লাল, খামারমুন্দিয়া), আতিয়ার রহমান (পিতা মান্দার বিশ্বাস, হাজিপুরমুন্দিয়া), দুই সহোদর আলেকজান্ডার ও গোলাম মোস্তফা (পিতা ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম এমএনএ, বলিদাপাড়া), দাউদ মণ্ডল (পিতা আত্তাব মন্ডল, কাশিপুর), বিজু গোপাল বিশ্বাস (পিতা কিরণ চন্দ্র বিশ্বাস, বড় সিমলা), কর্ণধর চন্দ্র বিশ্বাস (পিতা কিরণ চন্দ্র বিশ্বাস, বড় সিমলা), মাধব বিশ্বাস (পিতা ভোলানাথ বিশ্বাস, বড় সিমলা), মিন্টু (পিতা নুরুল ইসলাম, ফয়লা), দুই সহোদর সমির আলী ও তমিজ উদ্দিন (পিতা খোদা বক্স, ফয়লা), গোলাম সরোয়ার (পিতা আফাজ উদ্দীন, হেলাই), মোশারফ হোসেন (পিতা মান্দার আলী, হেলাই), আব্দুর রশিদ (পিতা আজিজ, রঘুনাথপুর) এবং আব্দুস ছাত্তার (পিতা জয়নাল বিশ্বাস, রঘুনাথপুর)। [মো. জুলফিকার আলী ভুট্টো]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড