You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেউলা যুদ্ধ (বোরহানউদ্দিন, ভোলা)

দেউলা যুদ্ধ (বোরহানউদ্দিন, ভোলা) সংঘটিত হয় ১৬ই অক্টোবর হাইকমান্ড মো. সিদ্দিকুর রহমান এবং আচমত আলী মিয়ার নেতৃত্ব। এ-যুদ্ধে অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয় এবং ১২ জন পুলিশ, রাজাকার- ও শান্তি কমিটি র সদস্য আত্মসমর্পণ করে।
হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমান ১৪ই অক্টোবর পাকবাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে রাজাকার নেতা চৌকিদার আবদুল মন্নানকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করেন এবং লাশ দাফন না করার জন্য সকলকে নির্দেশ দেন। ১৫ই অক্টোবর থানার এসআই শাজাহানের নেতৃত্বে ১৫ জন পুলিশ ও রাজাকারের একটি দল মন্নান চৌকিদারের লাশ গাছ থেকে নামিয়ে দাফন করে। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ ও রাজাকারদের আক্রমণ করলে তারা আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের অস্ত্রগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এ ঘটনার পর ১৬ই অক্টোবর বোরহানউদ্দিন থানা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে দেউলায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য প্রায় শতাধিক পাকসেনা, রাজাকার ও তাদের দোসররা অভিযান শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও পাকবাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কায় ক্যাম্প এলাকায় সতর্ক প্রহরাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। শান্তি কমিটির সদস্য মতি সিকদার এবং তোফাজ্জল সিকদার পাকসেনাদের সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে দেউলার দিকে নিয়ে আসতে থাকে। আসার পথে তারা রাস্তার পাশে অনেক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। দেউলার জানখার দিঘীর দক্ষিণ পাশে পৌঁছে পাকবাহিনী তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম ভাগে ছিল রাজাকার, পুলিশ ও পাঞ্জাবি। দ্বিতীয় ভাগে ছিল পুলিশ ও পাঞ্জাবি। তৃতীয় ভাগে ছিল শুধু পাঞ্জাবি। মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা জাহাঙ্গীর তালুকদারের মাধ্যমে পাকবাহিনীর অনুপ্রেবেশের সংবাদ পেয়ে আচমত মিয়া ও হাইকমান্ড মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সদর আলী হাওলাদারের বাড়ির পুকুরের পূর্ব পাশে অবস্থান নেন। রণকৌশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রথম গ্রুপকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন। দ্বিতীয় গ্রুপ রেঞ্জের মধ্যে এলে বেলা ১১টার দিকে হাইকমান্ড মো. সিদ্দিকুর রহমান পাকবাহিনীকে লক্ষ করে গোলাবর্ষণ করেন। সঙ্গে-সঙ্গে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও সাপোর্টিং গোলাবর্ষণ করতে থাকেন। পাকবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষে প্রায় দেড় ঘণ্টার যুদ্ধে পাকবাহিনীর অর্ধশত সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন পুলিশ, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী শান্তি কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিল মতি সিকদার ও তোফাজ্জল সিকদার। পাকহানাদারদের তৃতীয় গ্রুপ জানখার দিঘীর পাড়ে থেকে যায়। এক পর্যায়ে তারা পিছু হটে বোরহানউদ্দিনের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা আচমত মিয়া ও হযরত আলীর গ্রুপ তাদেরকে গাজিপুর গ্রামের সুলতান আহমেদ পঞ্চায়েতের বাড়ির কাছে পুনরায় আক্রমণ করেন। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ-যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয়। বাকিরা খেয়া পার হয়ে বোরহানউদ্দিনে চলে যায়। জানখার দিঘীর দক্ষিণ পাশে পাঠান বাড়ির একটি ঘরের পাটাতনে একজন আহত পাঞ্জাবিকে আনজত আলী, আব্দুল মজিদ ও স্থানীয় লোকজনরা আটক করে পিটিয়ে মেরে ফেলে। দেউলার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ৪০টি ৩০৩ রাইফেল, সহস্রাধিক রাউন্ড গুলি ও ১০-১২টি চাইনিজ রাইফেল হস্তগত করেন। এ-যুদ্ধের খবর দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হাইকমান্ড সিদ্দিকুর রহমান কার্যত সমগ্র ভোলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে আবির্ভূত হন। আর এ সময় থেকেই তিনি সকলের নিকট হাইকমান্ড বা বাঘা সিদ্দিক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। [শিমুল চৌধুরী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!