দেওড়াছড়া গণহত্যা (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার)
দেওড়াছড়া গণহত্যা (কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার) সংঘটিত হয় ৩রা এপ্রিল। এতে ৫৮ জন চা-শ্রমিক শহীদ হন।
ঘটনার দিন পাকবাহিনী বাগানের নিরীহ ৭০ জন চা- শ্রমিককে কাজ দেয়ার কথা বলে মৌলভীবাজার নেয়ার জন্য বাসে তোলে। দেওড়াছড়া-মৌলভীবাজার সড়কের এক নির্জন স্থানে একটি খালের পাড়ে দাঁড় করিয়ে তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৫৮ জন চা-শ্রমিক ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। বাকিরা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। স্থানীয় রাজাকাররা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করে। সেদিন পাকবাহিনী ও রাজাকাররা চা-শ্রমিকদের ঝুপড়িগুলোতে লুটপাট এবং নারীনির্যাতন চালায়। রহিমপুর ইউনিয়নের রাজাকার আব্দুল করিম মেম্বার, সিদ্দেক আলীসহ অন্য রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী শ্রমিকদের ধরে আনে। তবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সোনাপুরের মুসলিম লীগ নেতা সোনা উল্যা রাজাকারদের পেছনের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে। সেদিন বাগানে রাজাকার ও পাকসেনাদের জিপ দেখে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়। অনেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাগানে ঢুকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী অসহায় ও আতঙ্গিত শ্রমিকদের রেশন দেয়ার লোভ দেখিয়ে একত্রিত করে। পরে তাদের বাসে উঠতে নির্দেশ দেয়। ৭০ জন শ্রমিক ভর্তি বাসটি খাদে পড়ে গেলে শ্রমিকদের বাধ্য করা হয় এটি টেনে তুলতে। তখন সেখানে এসে উপস্থিত হয় পাকবাহিনীর এক মেজর। তার নির্দেশে শ্রমিকদের একটি নালার পাশে নিয়ে বিবস্ত্র করে তাদের পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। তারপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহত ৫৮ জনের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলো— উমেশ সবর, হেমলাল কর্মকার, লক্ষণ মূড়া, বিজয় ভূমিক, আকুল রায় ঘাটুয়ার, বিনোদ নায়েক, সুনারাম গোয়ালা, প্ৰহ্লাদ নায়েক, মাহীলাল রায় ঘাটুয়ার, মংরু বড়াইক, বিশ্বনাথ ভূঁইয়া, শাহজাহান ভূঁইয়া, ভাদো ভূঁইয়া, আগুন ভূঁইয়া, জহন গোয়ালা, অনীল গোয়ালা, গগনা মৃধা, লক্ষ্মী চরণ সবর, গোলক নারায়ণ মুদী, ভুবন চানু, গোপাল শুক্লবৈদ্য, হরেন্দ্র কানু, কুকুয়া কানু, রাম কিশোর উপাধ্যায়, সুধীর কর্মকার, রসিক কর্মকার, ধনিয়া রায় ঘাটুয়ার, বাবু কর্মকার, শ্রীধর মার, তারাচান ভূমিজ, গোবর্ধন ভূমিজ, দুর্গাচরণ তেলেঙ্গা, গাঙ্গানা তেলেঙ্গা, বন্ধুয়া গঞ্জ, লক্ষী চরণ কুর্মী, বলরাম উড়াং, নারায়ণ ভূমিজ, গুরুদাস, রবিদাস, মরু উড়াং, রাম ভূঁইয়া, লুটু কুটু কুর্মী, মিউলাল ঘাটুয়ার, রথ মুড়া, ঝনক রায় তাঁতী, শ্ৰীকৃষ্ণ রৌতিয়া ও মেখু বড়াইক। গণহত্যা স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [মুজিবুর রহমান রঞ্জু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড