You dont have javascript enabled! Please enable it!

দেওয়ানহাট ফায়ার ব্রিগেড ক্যাম্প অপারেশন (চট্টগ্রাম)

দেওয়ানহাট ফায়ার ব্রিগেড ক্যাম্প অপারেশন (চট্টগ্রাম) পরিচালিত হয় ১৪ই ডিসেম্বর। চট্টগ্রাম শহরস্থ দেওয়ানহাট ফায়ার ব্রিগেডে পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। এখানে সাধারণ লোকদের ধরে এনে নানারকম নির্যাতন করা হতো। মো. আবুল বশর নামে একজন নিরীহ চাকরিজীবী তাঁর যুবতী মেয়েকে পাকহানাদার ও তাদের স্থানীয় দোসর বিহারিদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তাঁকে ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। ঐ অফিসে চাকরিরত আব্দুল মোত্তালেবের মাধ্যমে এ সংবাদ পানওয়ালাপাড়ার সবুজবাগের আবু সাঈদ সরদারদের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌঁছালে পাকবাহিনীর এই নির্যাতন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ফায়ার ব্রিগেড ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মৌলভী সৈয়দ আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দীন, আবু সাঈদ সরদার, ডা. মাহফুজুর রহমান, এনামুল হক দানু, আবদুল্লাহ আল-হারুন, ডা. মাহবুব, ডা. জাফর উল্লাহ, মোহাম্মদ হারেস এবং জালাল উদ্দিন আহমেদ।
এ অপারেশনে অংশ নেন ফজলুল হক, অমল মিত্র, জাফর উল্লাহ, জাহিদ হোসেন, ফয়েজুর রহমান প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রাত দুটা ত্রিশ মিনিটে ঘটনাস্থলে যান। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগ অনুযায়ী তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মচারী আব্দুল মোত্তালেব লন্ড্রি থেকে পাকসেনাদের সামরিক পোশাক এনে দেয়াসহ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশনকালে এ পোশাক পড়েছিলেন হানাদারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। ফজলুল হক ও অমল মিত্র গার্ডদের নিরস্ত্র করেন। তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফায়ার ব্রিগেডের দোতলায় পাকবাহিনীর অবস্থানস্থলে ১০ পাউন্ড বিস্ফোরক স্থাপন করে। অন্য একটি দল সমপরিমাণ বিস্ফোরক বাইরের গার্ডরুমে স্থাপন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ৩- ২৫ মিনিটে পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিস্ফোরণে ফায়ার ব্রিগেডের একাংশ উড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য ছিল বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পাকবাহিনী এগিয়ে এলে রাস্তায় তাদের এম্বুশ করবেন। এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন হারুন গ্রুপ ও লোকমান গ্রুপের যোদ্ধারা। কিন্তু পাকবাহিনী এগিয়ে না এসে ক্যাম্পের ভেতরে থেকে শূন্যে কয়েকটি গুলি ছোড়ে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিচালিত এ অপারেশনের সফলতা পাকবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে দেয় ৷ [সাখাওয়াত হোসেন মজনু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!