You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা)

দুর্গাপুর উপজেলা (নেত্রকোনা) একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা। এর উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে নেত্রকোনা সদর ও পূর্বধলা, পূর্বে কলমাকান্দা এবং পশ্চিমে ধোবাউরা উপজেলা। সমতল এবং গারো পাহাড় ও উপত্যকা নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় বাঙালি জনগোষ্ঠীসহ অনেক ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী মানুষের বাস।
১৮৪৮ সালে দুর্গাপুরে গারো বিদ্রোহ হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে হাজং বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৪২-৪৩ সালের টংক আন্দোলন এবং ১৯৪৬-৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলন এ-অঞ্চলের স্বাধীনতাপূর্ব বড় রাজনৈতিক ঘটনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর দুর্গাপুরের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবল জনমত তৈরি হয়। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।
এডভোকেট সাদির উদ্দিন আহমেদ এমএনএ, আব্দুল মজিদ তারা মিয়া এমপিএ, থানা আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি আরব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ফরায়জী এবং আমীর উদ্দিন আহাম্মদের নেতৃত্বে থানা সদরে প্রায় প্রতিদিন মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এলাকার মানুষ লাঠিসোঁটা ও দেশী অস্ত্র নিয়ে এসব মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। এভাবে উপজেলার সচেতন মানুষ, বিশেষ করে যুবসমাজ সশস্ত্র যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সীমান্তবর্তী থানা হিসেবে দুর্গাপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে থানার রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আব্দুল মজিদ তারা মিয়া এমপিএ, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন ফরায়জী, আমীর উদ্দিন আহাম্মদ, জালাল উদ্দিন তালুকদার, সুভাষ মারমা প্রমুখ দুর্গাপুরে মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২৫শে মার্চ রাতে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও পিলখানায় পাকবাহিনীর আক্রমণের খবর সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যতা উপলব্ধি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এ-সময় দুর্গাপুর থানার একজন সাব- ইন্সপেক্টর ডামি রাইফেল দিয়ে থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। কলেজের ছাত্র এলাকার যুবকরা এ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। সারাদেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে এলাকার যুবকরা সীমান্ত পেরিয়ে দলে-দলে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতের মহেশখলা, মহাদেও রংড়া, বাঘমারা ও শিববাড়ি ইয়ুথ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের ভর্তি করা হয়। জেলা প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে তাদের ভারতের তুরা প্রেরণ করা হয়। দুর্গাপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকে তুরায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
২৯শে এপ্রিল পাকবাহিনী একযোগে নেত্রকোনা, পূর্বধলা ও দুর্গাপুরে প্রবেশ করে। পরে দুর্গাপুরে অনুপ্রবেশকারী পাকসেনারা বিরিশিরি পি সি নল হাইস্কুল ও খ্রিস্টান মিশনারি গির্জায় ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল মেজর শরীফ। এক মাস পর দায়িত্ব নেয় মেজর সুলতান। পাকিস্তানি বাহিনী দুর্গাপুরের বিজয়পুর, ফারাংপাড়া, রারোমারি ও বাদামবাড়িতেও ক্যাম্প স্থাপন করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ এলাকা থেকে জাতীয় পরিষদে কনভেনশন মুসলিম লীগ-এর প্রার্থী ছিল কেতাব আলী তালুকদার। নির্বাচনে পরাজিত কেতাব আলী ভোট না পাওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। পাকহানাদার বাহিনী দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে ক্যাম্প স্থাপন করার পর কেতাব আলী তালুকদার বিপুল ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তার নেতৃত্বে ইউনিয়ন চেয়াম্যানদের সহযোগিতায় দুর্গাপুরে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। এ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে আরো যারা ছিল, তারা হচ্ছে- কেতাব আলী তালুকদার, আ. খালেক, ডা. আবদুল মান্নান, আমছর মেম্বার, হামিদ মেম্বার, চান মিয়া মেম্বার, হাদী চেয়ারম্যান, জলিল চেয়ারম্যান, ফজলুল করীম চেয়ারম্যান, সবদুল চেয়ারম্যান, আবদুস সাত্তার চেয়ারম্যান, ইদ্রিছ চেয়ারম্যান, পেনু ভূঁইয়া, আবদুর রহমান, রাজাকার কমান্ডার আবদুল মজিদ, আলবদর কমান্ডার হাবিবুর রহমান প্রমুখ। কনভেনশন মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা উপজেলা শান্তি কমিটি গঠন করে।
দুর্গাপুরে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশের পর থেকে দালাল কেতাব আলী তালুকদার তাদের অন্যতম পরামর্শক নিযুক্ত হয়। তার পরামর্শে দুর্গাপুরে গণহত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ইত্যাদি চালানো হয়।
দুর্গাপুর থানা এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দালালদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজার নামে বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করত। সে-সময় গ্রাম থেকে অনেক মহিলাকে বিরিশিরি ক্যাম্পে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। মে মাসে বিরিশিরি ক্যাম্প থেকে ২ জন পাকসেনা কয়েকজন রাজাকার ও দালাল নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া গ্রামে মহিলাদের খোঁজে প্রবেশ করে। এদের খারাপ উদ্দেশ্য টের পেয়ে এলাকার নারীরা নিজেদের রক্ষার জন্য তালে হোসেন ওরফে ছোটুনির বাড়িতে আশ্রয় নেন। পাকসেনারা সেখানে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে ঘরে আশ্রয় নেয়া নারী ও এলাকাবাসী ২ জন পাকসেনাকে আটক করে। নারী ও ক্ষুব্ধ জনতার আক্রমণে তারা নিহত হয়। এলাকার ডেন্ডু মিয়া, খালেক, তোতা মিয়া, ছোট্টনি ও তাঁর স্ত্রী মোগলের নেছা, মজিদ, সুরজ আলী, মতিউর, একিন আলী পাকসেনাদের প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ সংবাদ বিরিশিরি ক্যাম্পে পৌঁছলে পরের দিন শতাধিক পাকসেনা গাঁওকান্দিয়া গ্রাম ঘেরাও করে। তারা অর্ধশতাধিক মানুষকে ধরে এনে গাঁওকান্দিয়া গ্রামের ইউনুছ আলী মাস্টারের বাড়ির একটি ঘরে আটক করে প্রথমে ব্রাশ ফায়ার ও পরে ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। ৬ই মে সংঘটিত গাঁওকান্দিয়া গণহত্যা – এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধে একটি লোমহর্ষক ঘটনা হিসেবে পরিচিত।
গাঁওকান্দিয়ায় ২ জন পাকসেনাকে হত্যা করায় গাঁওকান্দিয়া ও চৈতাটি থেকে শিবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়িতে পাকসেনারা অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া তারা গুজিরকোনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদার ও শামছ উদ্দিন তালুকদার, ধানশিরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারী, বাকলজোড়া গ্রামের আবদুল করিম, বালিচান্দা গ্রামের নওয়াব আলী, হাজী সফর উদ্দিন ও আলা উদ্দিনের বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়। শেহড়াগঞ্জ গ্রামে পাকসেনারা প্রবেশ করে নির্মম নির্যাতন চালায় এবং গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সবকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যও হানাদাররা বিভিন্ন গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। দুর্গাপুরের বালিচান্দা গ্রামের ছয়াব আলী, হাজী সফর উদ্দিন এবং আলা উদ্দিনের বাড়িও সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয়।
দেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি পুড়াকান্দুলিয়ার গৌরাঙ্গ সাহাকে বিরিশিরি ক্যাম্পে ধরে এনে তাঁর কাছে পাকিস্তানি মেজর অর্থ দাবি করে। জীবন বাঁচাতে তিনি মেজরের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দালালদের মাধ্যমে প্রদান করেন। তারপরও তাঁকে হত্যা করা হয়।
দুর্গাপুরের বিরিশিরি বধ্যভূমিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের অসংখ্য মানুষকে পাকহানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। বিরিশিরি ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজর সুলতান এলাকায় কুখ্যাত ছিল। দালাল কেতাব আলী তালুকদার তার সহযোগী আমছর মেম্বার ও হামিদ মেম্বারের পরিকল্পনায় দুর্গাপুরে হত্যাকাণ্ড চালাত। নেত্রকোনা মহাবিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক (শহীদ বুদ্ধিজীবী) আরজ আলীকে পাকসেনারা ১২ই আগস্ট নেত্রকোনা কলেজ হোস্টেল থেকে ধরে এনে বিরিশিরি বন্দিশিবিরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর ১৬ই আগস্ট হত্যা করে। এখানে এ কে সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ আউয়ালকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কুলাগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলী হোসেন, বহেরাতলী গ্রামের শহীদ মিয়া, উদয়পুর গ্রামের আবু মণ্ডল, কাকৈরগড়ার আব্দুল লতিফ, গাঁওকান্দিয়া গ্রামের মাখন মাস্টার, তালে হোসেন ওরফে ছুটুনি, কাকড়াকান্দার জালাল মাস্টার, নগুয়া গ্রামের সতীশ বর্মণ, শরিস্তলার নিতাই বর্মণ, রামকান্দার আছমত খাঁ ও তাঁর ছেলে লাল খাঁ, কলেজ ছাত্র বিলাল হোসেন ও তাঁর ভাই দিলদার হোসেন, নাগেরগাতি গ্রামের অতুলেশ্বর সান্যাল, সালুয়াকান্দার আবদুল আজিজ ও আবদুল গনী-সহ অসংখ্য নিরীহ স্বাধীনতাকামী মানুষকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা হত্যা করে। দুর্গাপুর উপজেলা ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের অনেক মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে এদিকে আসত। পাকসেনারা জারিয়া-ময়মনসিংহ ট্রেন থেকে অনেককে ধরে বিরিশিরি ক্যাম্পে নিয়ে যেত এবং নির্মম নির্যাতনের পর বিরিশিরি বধ্যভূমি-তে হত্যা করত। এখানে পূর্বধলা উপজেলার ঘগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এবং একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক সুরুজ আলী ও মোকশেদা আলীকে হত্যা করা হয়।
দুর্গাপুরে পাকবাহিনী প্রবেশের পর বিরিশিরি পি সি নল হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে তারা খ্রিস্টান মিশনারি গীর্জাকে নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করে। দুর্গাপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমি হলো বিরিশিরি সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের বধ্যভূমি ও বিজয়পুর বধ্যভূমি।
ফারাংপাড়া যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২৮শে জুন। এতে ৬৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও কয়েকজন আহত হন।
সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় দুর্গাপুরে যুদ্ধের তীব্রতা ছিল বেশি। ১৫ই জুলাই কোম্পানি কমান্ডার ফজলুর রহমান আকঞ্জির নেতৃত্বে ৯০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ফারাংপাড়ায় পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। এ আক্রমণে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৪ই আগস্ট শিবগঞ্জ-বিজয়পুর রাস্তায় পাকসেনারা টহল দেয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা হঠাৎ তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এতে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৩শে সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর সীমান্তে পাকবাহিনীর নিয়মিত টহলের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। ফলে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধ প্রায় ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ২৫শে সেপ্টেম্বর ফজলুর রহমান আকঞ্জির কোম্পানির যোদ্ধা ভদ্র মং বাদামবাড়ি পাকসেনা ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। এ সময় ভদ্র মং-এর সঙ্গে ছিলেন ১১ জন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। এ আক্রমণে পাকবাহিনীর ক্যাম্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৪ই অক্টোবর দুর্গাপুর- নাজিরপুর সড়কে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২৩শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দুর্গাপুর সদরে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও ১ জন আহত হয়। ২৪শে নভেম্বর বিরিশিরি-বিজয়পুর সড়কে চলাচলকারী পাকবাহিনীর একটি দল মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে পড়ে। সে-সময় বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়। ৩রা ডিসেম্বর দুর্গাপুরের বিজয়পুর পাকসেনাদের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন। এ-যুদ্ধ ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। ৬ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী বিজয়পুর ক্যাম্প ছেড়ে দুর্গাপুর সদরে চলে যায়। এ-যুদ্ধে পাকসেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণীর একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ৬ই ডিসেম্বর রাতে ভারতীয় মিত্রবাহিনী-র সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি কোম্পানি মিলিত হয়ে বিরিশিরি পাকবাহিনীর ক্যাম্পের ওপর আক্রমণ চালায়। সারারাত যুদ্ধ চলে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে পূর্বধলার জারিয়ায় চলে যায়। দুর্গাপুর হানাদারমুক্ত হলে আবদুর রশিদ, জব্বার, জাফর-সহ বেশ কয়েকজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। ৭ই ডিসেম্বর দুর্গাপুর উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
দুর্গাপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- সুধীর হাজং (পিতা প্রকাশ হাজং, বাগাঝড়া; পুটিমারি যুদ্ধে শহীদ), আবদুল জব্বার (পিতা গুঞ্জর আলী, দুবরাজপুর; টাংগাটি যুদ্ধে শহীদ), সন্তোষ চন্দ্র বিশ্বাস (পিতা কটুচান বিশ্বাস, কুড়ালিয়া; বিজয়পুর যুদ্ধে শহীদ) এবং আশরাফ আলী (পিতা সেলিম শেখ, কৃষ্ণের চর; পুলিশ সদস্য, পাবনা সি এন্ড বি গুদামের পাশে শহীদ)।
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সামনে শহীদদের স্মরণে ‘বিজয় উল্লাস’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। বিরিশিরি সোমেশ্বরী নদীর পারে বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্গাপুর পৌর এলাকায় রয়েছে শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক এবং শহীদ সন্তোষ পার্ক। [জুলফিকার আলী শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!