দুর্গাপুর যুদ্ধ (পত্নীতলা, নওগাঁ)
দুর্গাপুর যুদ্ধ (পত্নীতলা, নওগাঁ) সংঘটিত হয় ১২ই অক্টোবর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। অপরদিকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের কয়েকজন হতাহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার আমাইড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস- বাহিনীর অত্যাচার অনেক গুণ বেড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা ও সহযোগিতাকারীদের ওপর এরা অমানবিক নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকহানাদার বাহিনীর সহায়তায় তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দীনের নেতৃত্বে ১৪ই আগস্ট ভারত থেকে মো. নজরুল ইসলাম ও মো. মফিজ উদ্দীনসহ ১০-১২ জন মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশে এসে আমাইড় ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের লতিবরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাঁরা পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচার থেকে এলাকার নিরীহ মানুষকে রক্ষার জন্য শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা শত্রুর বিরুদ্ধে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রসহ সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতিও নিতে থাকেন। এদিকে পাকবাহিনীর দোসর ডাসনগরের শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার তায়েব আলী, তৈয়ব আলী এবং তাদের সঙ্গীরা মাতাজিহাট পাকিস্তানি ক্যাম্পে গিয়ে দুর্গাপুর গ্রামের লতিবর রহমানের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান করার খবর পৌঁছে দেয়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করতে অক্টোবর মাসের এক গভীর রাতে স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহযোগিতায় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল, গ্রেনেড ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করেন। রাতে শুরু হয়ে পরদিন সকাল পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কম হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম, মো. মফিজ উদ্দীন, বাড়ির মালিক লতিবর রহমান এবং ২ জন গ্রামবাসী অছির মৃধা ও গজিমুদ্দিন শহীদ হন। যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কয়েকজন হতাহত হয়।
যুদ্ধের পর গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের ভয়ে গ্রামবাসী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মরদেহ ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দাফন করতে ভয় পাচ্ছিল। পরে শহীদ ৫ জনকে গ্রামের পাশের একটি খোলা জায়গায় কবর দেয়া হয়। [বুলবুল চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড