মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ দুর্জয় পাবনা (পাবনা সদর)
দুর্জয় পাবনা (পাবনা সদর) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্র জেলা প্রশাসন অফিসের পাশে অবস্থিত একটি স্মৃতিসৌধ। এতে ২৫শে মার্চের কালরাত, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস, ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন, ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ইত্যাদি প্রতীকী অর্থে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ-এর অংশবিশেষ, তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার ৪ লাইন এবং পাবনার ১৬৯ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম এতে উৎকীর্ণ রয়েছে। স্মৃতিসৌধের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ২৬শে মার্চ এবং শেষ হয় ৫ই ডিসেম্বর। স্মৃতিসৌধের ডিজাইনার শিল্পী নিজামুদ্দীন খান বাদল। এ স্মৃতিসৌধের মূল বেদীর ব্যাস ২৫ ফুট এবং এটিকে সমান ৭টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। বেদীর ৭টি ভাগ দ্বারা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে বুঝানো হয়েছে। আর এর ২৫ ফুট ব্যাস ২৫শে মার্চের কালরাতকে বুঝায়। এজন্য কালো মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। একটি বেদীর ব্যাস ১৬ ফুট। এর দ্বারা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মহান বিজয় দিবস বুঝায়। এ বেদীর ওপরে রয়েছে ৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪টি মানব প্রতিকৃতি। ৯ ফুট উচ্চতা দ্বারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাস আর ৪টি মানব প্রতিকৃতি রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতির প্রতীকী রূপ বুঝায়। দ্বিতীয় বেদীর ওপর থেকে স্তম্ভের শীর্ষ ২৬ ফুট, যা ২৬শে মার্চের মহান স্বাধীনতা দিবসকে বুঝায়। সবার ওপরে জাতীয় পতাকার প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে।
১৯৯৮ সালের ২৩শে নভেম্বর এক সভায় পাবনার জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এবং জেলা পরিষদের সৌজন্যে নির্মিত এ স্মৃতিসৌধটির নামকরণ করা হয় ‘দুর্জয় পাবনা’। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ওপরের ৪টি ফাঁকা পাথরে যথাক্রমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অংশবিশেষ, পাকিস্তানি হানাদার বাাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল এবং ‘দুর্জয় পাবনা’ নামফলকের নিচে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুপ্রভাত’ কবিতার প্রথম চার লাইন লিপিবদ্ধকরণ করা হবে। নিচের ৪টি পাথরে পাবনা জেলার ১৬৯ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম উৎকীর্ণ করা এবং নিচের ও ওপরের পাথরের ফাঁকা জায়গাগুলোতে ৭টি ভাস্কর্য খোদাই করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৯৯৮ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এ স্মৃতিসৌধটির শুভ উদ্বোধন করেন। পাবনার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক হিসেবে ‘দুর্জয় পাবনা’ গৌরব বহন করে চলছে। [মো. হাবিবুল্লাহ্]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড