You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে দীঘিনালা উপজেলা (খাগড়াছড়ি) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে দীঘিনালা উপজেলা (খাগড়াছড়ি)

দীঘিনালা উপজেলা (খাগড়াছড়ি) বর্তমান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অর্ন্তগত। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে লংগদু উপজেলা, পূর্বে বাঘাইছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে পানছড়ি ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। এখানে বাঙালিদের পাশাপাশি চাকমা, ত্রিপুরা, মার্মা প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার লোকসংখ্যা ছিল ১০ হাজারের মতো। মাইনী এ উপজেলার প্রধান নদী। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর হ্রদের পানি আর নদীর পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বোয়ালখালী বাজার ছিল এ উপজেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। এ বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে লোকজন আসত। দীঘিনালা থানা গঠিত হয় ১৯১৬ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৪ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১নং সেক্টরের অধীনে ছিল এ উপজেলা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাতই মার্চের ভাষণ-এর পর থেকে দীঘিনালার মানুষ স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। সারাদেশের মতো উত্তাল হয়ে ওঠে দীঘিনালাও ও। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যান। সে-সময় স্থানীয় অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সৈয়দ হাশেম (উর্দু মাস্টার হিসেবে পরিচিত), রুহুল আমিন চৌধুরী, ছগির মাস্টার, যতিন মাস্টার ও সৈয়দ আরব ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা। এঁদের নেতৃত্বে আরো ১০-১৫ জন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বোয়ালখালী বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ডাকে লোকজন মিছিল-মিটিং করে। দীঘিনালা থানা তখন রাঙ্গামাটি জেলার অধীনে হলেও সর্বাধিক যোগাযোগ ছিল খাগড়াছড়ির সঙ্গে। স্থানীয় নেতারা খাগড়াছড়ির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাঁদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা আন্দোলন-সংগ্রাম করতেন।
১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি থেকে দীঘিনালার লোকজন মিছিল-মিটিং শুরু করে। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ হাশেম, রুহুল আমিন চৌধুরী, ছগির মাস্টার, যতিন মাস্টার, সৈয়দ আরব প্রমুখ স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করতে থাকেন। দীঘিনালায় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তাঁরা পরিকল্পনা করেন। ২৫শে মার্চ রাতে সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর আক্রমণের খবর পরের দিন ২৬শে মার্চ দীঘিনালার লোকজন জানতে পারে। মার্চের শেষদিকে রাঙ্গামাটি থেকে দুজন পুলিশ সদস্য দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজারে আসেন। তাঁদের একজনের নাম এখলাস হাওলাদার (সিলেট)। তাঁরা এখানে এসে দীঘিনালা থানায় আশ্রয় নেন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে নেতাদের সহায়তায় স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণের জন্য উৎসাহিত করেন। এখলাস হাওলাদার দুসপ্তাহ প্রশিক্ষণ দেন। স্থানীয় যুবকরা কাঠের তৈরি রাইফেল দিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। বোয়ালখালী বাজারের পুরাতন মাঠে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। হারুনুর রশিদ, মিলন বড়ুয়া, ফজল মেম্বার, লেদু মিয়া, আলী আকবরসহ ১৫-২০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও রাঙ্গুনিয়া থেকে শতশত শরণার্থী বোয়ালখালী বাজারে আসতে থাকে। এখান থেকে তারা সীমান্তের দিকে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন এসব শরণার্থীর খাবারের ব্যবস্থা করে এবং পাহাড়ি পথ দিয়ে সীমান্তে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়।
পাহাড়ি নেতাদের সহায়তায় রাজাকার বাহিনী গড়ে উঠলে থানার ওসি আবদুল হামিদ তাদের সহযোগিতা করে। তার বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। তার অধীনে থানায় ৬-৭ জন পুলিশ ছিল। ওসি আবদুল হামিদ স্থানীয় যুবকদের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে চাপ দেয় এবং জোর করে বেশ কয়েকজনের নাম রাজাকার বাহিনীতে লিপিবদ্ধ করে। এ ঘটনা খাগড়াছড়ির সিনিয়র নেতাদের জানালে নুর বক্সের নেতৃত্বে ৭-৮ জন নেতা এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দীঘিনালায় আসেন। দীঘিনালা থেকে ছগির মাস্টার, হারুন, সৈয়দ আরবসহ ৮-১০ জন তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেন এবং ওসিকে শাসিয়ে যান যাতে আর কাউকে রাজাকারে যেতে চাপ দেয়া না হয়। এ-সময় হারুনুর রশিদ থানা প্রাঙ্গণে টাঙানো পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলেন।
দীঘিনালা উপজেলায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন হারুনুর রশিদ, মিলন বড়ুয়া ও আলী আকবর।
পাকসেনাদের মোকাবেলা এবং প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় যুবকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী খাগড়াছড়ি দখলে নেয়ার পরপরই স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় তারা দীঘিনালায় আসে এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্ম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের খুঁজতে থাকে। অপরদিকে খাগড়াছড়ির সিনিয়র নেতাদেরও কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ফলে নির্যাতন থেকে বাঁচতে তাঁরা নিরাপদ স্থানে সরে যান। সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ না পাওয়া ও প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ না থাকায় তাদের পক্ষে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি এপ্রিলের শেষদিকে পাকসেনারা দীঘিনালায় প্রবেশ করে। তারা দিনের বেলায় এসে স্থানীয় রাজাকারদের দায়িত্ব দিয়ে বিকেলে আবার চলে যেত। এরপর একদিন এসে তারা ইউনিয়ন অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে। তবে এ ক্যাম্পে রাজাকাররাই থাকত। স্থানীয় রাজাকারদের পাশাপাশি মিজো বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্যরাও এখানে থাকত। পাকসেনারা খাগড়াছড়ি থেকে এসে টহল দিয়ে আবার চলে যেত।
পাকিস্তানিরা খাগড়াছড়ি চলে যাওয়ার পর স্থানীয় রাজাকারদের উৎপীড়ন শুরু হয়। কেউ-কেউ স্থানীয় যুবকদের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তখন যতিন মাস্টার ও রুহুল আমিন চৌধুরী প্রমুখের পরামর্শে আলী হোসেন, মান্নান ও হারুনুর রশিদ দীঘিনালা ছেড়ে চলে যান। মে মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকরা রাঙ্গুনিয়ার দিকে চলে যান।
২৬শে মার্চের পরপরই দীঘিনালা থানার ওসি আবদুল হামিদ স্থানীয় শান্তি কমিটির প্রধান হেডম্যান জ্ঞান রঞ্জন চৌধুরীর সহায়তায় লোকজনদের রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগ করে। স্থানীয় রাজাকারের মধ্যে ব্যবসায়ী আমিন তালুকদার (রাঙ্গুনীয়া), আবদুস সালাম সওদাগর (সাতকানিয়া), শরফতুল্লাহ মাস্টার ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও দীঘিনালার সকল হেডম্যান-কারবারী রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বাইরে থেকে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মিজো বাহিনী ও মুজাহিদ বাহিনী। এরা বোয়ালখালী বাজারে লোকজনদের বিশেষ করে হিন্দু ব্যবসায়ীদের নির্যাতন ও তাদের মালামাল লুটপাট করত। আর চাকমা রাজাকাররা স্থানীয় লোকজনের গরু-ছাগল নিয়ে যেত।
পাকসেনারা দীঘিনালা দখলে নেয়ার আগেই স্থানীয় দোসরদের মাধ্যমে তাদের কাছে খবর চলে যায় কারা মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং কারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে। তাই পাকসেনারা দীঘিনালা এসেই ওসি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে রুহুল আমিন চৌধুরী, লেদু মিয়া, ছগির মাস্টার, হারুনুর রশিদ, সৈয়দ আরব প্রমুখের খোঁজ-খবর নেয়। ওসি আবদুল হামিদ এবং রাজাকাররা তাঁদের বাসা দেখিয়ে দেয়। এরপর পাকসেনারা রাজাকারদের সহ দুটি গাড়িতে করে গিয়ে সৈয়দ আরব এবং রুহুল আমিন চৌধুরীর বাসা ঘেরাও করে। তারা সৈয়দ আরব, তাঁর চাচা সৈয়দ হাশেম (উর্দু মাস্টার) এবং রুহুল আমিন চৌধুরীকে ধরে থানায় নিয়ে যায় এবং থানার বাইরে বেলতলায় সৈয়দ আরবকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। অপর দুজনকে থানার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। মুমুর্ষু অবস্থায় সৈয়দ আরবকে থানার মাঠে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বাসায় নিয়ে চিকিৎসা করায়। অপরদিকে ঐদিনই পাকসেনারা সৈয়দ হাশেম ও রুহুল আমিন চৌধুরীকে থানা থেকে জিপে করে খাগড়াছড়ি নিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি সদরে এক মাসের মতো আটকে রেখে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এক মাস নির্যাতন চালানোর পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। নির্যাতনে রুহুল আমিন চৌধুরীর বুকের বাম পাশের হাড় ভেঙ্গে যায়। তিনি আর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি, যুদ্ধের পরপরই তিনি মারা যান। স্থানীয় রাজাকাররা বোয়ালখালী বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল লুট করে এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। ব্যবসায়ী যোগেন্দ্র সাহা, অরূপ সাহাসহ অনেক ব্যবসায়ীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পাকসেনারা প্রায়ই গাড়ি নিয়ে দীঘিনালায় আসত এবং দিনেদিনেই আবার খাগড়াছড়িতে ফিরে যেত।
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বিএলএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল মুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়। এ-সময় চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা ও নোয়াখালীর অসংখ্য বিএলএফ সদস্য রাঙ্গামাটি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল ওবাম। অপারেশনের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন বিএলএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মণি।
১৬ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী (স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র; বর্তমানে প্রয়াত), নুরুন্নবী চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন বাবু চৌধুরী তিন ভাগে ভাগ হয়ে দেশে প্রবেশ করেন। একটি দলের নেতৃত্ব দেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। বিলাইছড়িতে তাঁর দলটি পাকিস্তানি বাহিনী ও মিজোদের সঙ্গে ১৬ই ডিসেম্বর সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৪ ঘণ্টা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। এদিনই ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। অপর একটি দলে ছিলেন নুরুন্নবী চৌধুরী ও কবির আহমদ চৌধুরী। রাঙ্গাপাহাড় থেকে রওনা দিয়ে এ গ্রুপটি ৭ দিন পায়ে হেঁটে বাঘাইছড়ির মারিশ্যা পৌঁছে। ডিসেম্বরের ১২ তারিখ খাগড়াছড়ি দিয়ে ক্যাপ্টেন বাবু চৌধুরী ও সুবেদার খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে ৬০-৬৫ জনের অপর একটি গ্রুপ বোয়ালখালী বাজারের দিকে আসে। রাঙ্গামাটির লংগদুর মাইনী থেকে আসে মেজর সোবহানের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন ভারতীয় সৈন্যের একটি গ্রুপ এবং বাঘাইছড়ির মারিশ্যা থেকে ভারতীয় বাহিনীর ক্যাপ্টেন বাদলের নেতৃত্বে ৭৫ জনের অপর একটি গ্রুপ।
বোয়ালখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা আসার সঙ্গে- সঙ্গে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজন দৌড়ে তাদের ঘরে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ঘর থেকে তাদের বের করে এনে হাতে বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে সামনে এগুতে নির্দেশ দেন। পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি এগুতে থাকে। হঠাৎ মর্টার থেকে শেলিং শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধারা বাংকারে অবস্থান নেন। এ-সময় বোয়ালখালী বাজারে শতাধিক মিজো, রাজাকার ও মুজাহিদ ছিল। মারিশ্যার দিক থেকে অগ্রসরমাণ ক্যাপ্টেন নুরুন্নবী চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং মাইনী থেকে অগ্রসরমাণ মেজর সোবহানের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সৈন্যদের কাছে এ খবর পৌঁছে। খবর পেয়ে দুটি গ্রুপই গুলি করতে-করতে বোয়ালখালী বাজারের দিকে এগিয়ে যায়। শুরু হয় প্রচণ্ড যুদ্ধ। মিজো, রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণের মধ্যে পড়ে। ফলে মিজো বাহিনী জঙ্গল দিয়ে আর রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যরা অন্য পথে পালিয়ে যায়। এখানকার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কেউ হতাহত হননি।
খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে যে দলটি বোয়ালখালী বাজারে প্রবেশ করে, সে দলটির কাছে স্থানীয়রা রাজাকারদের লুটপাটের ব্যাপারে অভিযোগ করে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা বাজারে নন্দ চাকমা নামে এক রাজাকারকে গুলি করে হত্যা করেন। যুদ্ধে একজন মিজো আহত হয়ে পরে মারা যায়। আরেকজন মিজোকে জীবিত অবস্থায় ধরা হয় এবং গণপিটুনিতে সে নিহত হয়। এর দুদিন পর নুরুন্নবীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি দীঘিনালায় আসে। বিজয়ের দুদিন আগেই সব রাজাকার ও মুজাহিদ দীঘিনালা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে ১৪ই ডিসেম্বর দীঘিনালা উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। [ইয়াছিন রানা সোহেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড