দিবর দিঘি গণকবর (পত্নীতলা, নওগাঁ)
দিবর দিঘি গণকবর (পত্নীতলা, নওগাঁ) নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় অবস্থিত। পত্নীতলা থানার পার্শ্ববর্তী সাপাহার থানায় পাকিস্তানি হানাদারদের একটি ক্যাম্প ছিল। একদল মুক্তিযোদ্ধা এ ক্যাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে আক্রমণ ও পাল্টা-আক্রমণের এক পর্যায়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শত্রুবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। শারীরিক নির্যাতন করে তাঁদের হত্যা করার পর ৬ জনের লাশ দিবর দিঘির পাশের মাঠে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়রা তাঁদের গণকবর দেয়। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার দিবর ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী সাপাহার থানা সদরে পাকহানাদার বাহিনীর একটি বড় ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে হানাদাররা সাধারণ মানুষের ওপর অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন ও হত্যাকাণ্ড চালাত। এক সময় মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। ভারতের দৌড়গঞ্জ অপারেশন ক্যাম্প থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মুক্তিযোদ্ধা সাপাহারের ক্যাম্পটিতে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের সোমবার মর্টার, লাইট মেশিনগান, এসএলআর, রাইফেল, গ্রেনেড ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন। ক্যাম্পটি ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার দূরে ছিল। গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলেন এবং আকস্মিক আক্রমণ পরিচালনা করেন। পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা-আক্রমণ করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে হানাদাররা টিকতে না পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে পরাজয়ের খবর পেয়ে পাকবাহিনী নজিপুর, মধইল, পোরশাসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য ক্যাম্প থেকে তাদের সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নতুন করে আক্রমণ করে। এ-সময় পাকহানাদার বাহিনীর হাতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়েন। তাঁরা হলেন— ওমর আলী, লাল মোহাম্মদ, বাবু লাল, মতি লাল বর্মণ, নমির উদ্দীন প্রমুখ। পাকহানাদারা আটককৃতদের তাদের মধইল ক্যাম্পে নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। শারীরিক নির্যাতনে তাঁদের প্রাণহানি ঘটে। এ-যুদ্ধের পর সাপাহার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত দিবর দিঘির পশ্চিম পাশের মাঠে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ পাওয়া যায়। দিবর গ্রামের স্বাধীনতার পক্ষের জনৈক কাবলী তার জমিতে পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো গ্রামবাসীদের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী একটি খেজুর গাছের নিচে গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেন। গণকবরে সমাহিত ৬ জনের ১ জন আদিবাসী। এলাকার সাধারণ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবরের জায়গাটি চিহ্নিত করে রেখেছে। এখানে স্থায়ীভাবে এখনো কোনো স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। তবে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে প্রতিবছর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ গণকবর ছাড়া শিহাড়া বাজারের দক্ষিণ পাশে দুজন অজ্ঞাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও খাড়ির পাশে আদিবাসীদের গণকবর রয়েছে। আকবরপুর ইউপির মধইল বাজারের ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। উপজেলার আমন্ত (পরানপুর) গ্রামে এবং আমাইড় ইউপির গগনপুরে (আদিবাসী পাড়ায়) গণকবর রয়েছে বলেও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। [বুলবুল চৌধুরী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড