You dont have javascript enabled! Please enable it!

দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (লক্ষ্মীপুর সদর)

দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (লক্ষ্মীপুর সদর) পরিচালিত হয় দুবার ৯ই আগস্ট ও ১০ই নভেম্বর। প্রথমবার ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। দ্বিতীয়বার বহু রাজাকার নিহত এবং দালাল বাজার হানাদারমুক্ত হয়।
লক্ষ্মীপুর-রায়পুর প্রধান সড়কের পাশে দালাল বাজারের অবস্থান। এটি হিন্দু অধ্যুষিত ও হিন্দু জমিদারদের প্রভাবাধীন এলাকা ছিল। পাকবাহিনী এ বাজারে একটি শক্তিশালী রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করে। যোগাযোগের দিক থেকে দালাল বাজারের আলাদা গুরুত্ব ছিল। কারণ রায়পুর বা রামগঞ্জ যেতে হলে এ বাজার অতিক্রম করতে হতো। দালাল বাজারের পার্শ্ববর্তী এন কে উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিস্তানি মিলিশিয়া বাহিনী ও রাজাকারদের আরেকটি ক্যাম্প ছিল। এ দুই ক্যাম্পের কারণে এ এলাকায় রাজাকারদের প্রবল প্রতাপ ছিল এবং তারা সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন চালাত। হিন্দু বাড়িগুলোতে তারা ব্যাপক লুটপাট ও নারীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালাত। আওয়ামী লীগ-এর নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে ধরে নির্যাতন ও নিপীড়ন করত।
রাজাকারদের এসব অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ই আগস্ট সুবেদার লুৎফর রহমান ও নায়েক সুবেদার ওয়ালী উল্যার নেতৃত্বে ক্যাম্পে আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে ২০ জন রাজাকার নিহত হয় এবং তাদের বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
মুক্তিবাহিনী দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্পে দ্বিতীয় অভিযান পরিচালনা করে ১০ই নভেম্বর। এদিনের অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজারকে পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন। পূর্বদিকে ল্যান্স নায়েক ছানাউল্যার দল, উত্তর দিকে সুবেদার আবদুল মতিনের দল এবং পশ্চিম দিকে আবুল খায়ের, মনসুর আহম্মেদ ও ধনু মিয়ার দল অবস্থান নেয়। সুবেদার আবদুল মতিনের দলের আক্রমণে এন কে উচ্চ বিদ্যালয়ের রাজাকাররা বেরিয়ে আসে। মাঠের মধ্য দিয়ে তারা দক্ষিণের ক্যাম্পে পালাতে থাকে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড গুলিতে বহু রাজাকার নিহত হয়।
অন্যরা লক্ষ্মীপুর থানা, বাগবাড়ি, বটু চৌধুরীর ভবন এবং ফাতেমা গার্লস স্কুলে অবস্থিত তাদের ক্যাম্পগুলোতে জড়ো হয়। পশ্চিম দিক থেকে মনসুর আহম্মদ ও আবুল খায়েরের দল এবং পূর্বদিকে ছানাউল্যার দল প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ করলে রাজাকাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের উচ্চস্বরে রাজাকারদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তারা অস্ত্র ফেলে দুহাত ওপরে তুলে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় পূর্ব দিক থেকে গোলাগুলি শুরু হলে রাজাকাররা আবার অস্ত্র হাতে তুলে গুলি করতে থাকে। এতে মুক্তিযোদ্ধা সিপাহি মনসুর আহম্মদ গুলিবিদ্ধ হন। মুক্তিযোদ্ধারা যখন মনসুর আহম্মদকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন রাজাকাররা অস্ত্র ফেলে দক্ষিণ দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। এসব অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয় এবং দালাল বাজার হানাদারমুক্ত হয়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!