You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.12 | দিকপুর যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

দিকপুর যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা)

দিকপুর যুদ্ধ (বেড়া, পাবনা) সংঘটিত হয় ১২ই ডিসেম্বর। এ-যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরপক্ষে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
বেড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যে গোলাবারুদ ছিল, তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। ফলে বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও গোলাবারুদ আনার জন্য ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের কুরমাইল ক্যাম্পে যান। এ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এমএনএ। বেড়ার মুক্তিযোদ্ধারা উচ্চতর প্রশিক্ষণ শেষে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেড়ায় আসেন এবং পাকসেনাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
বেড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অপারেশন ছিল দিকপুর যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। দিকপুর যুদ্ধের আগে বেড়ার মুক্তিযোদ্ধারা একে অপরের হাত ধরে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ শহীদ হলে তাঁর লাশ পাকসেনাদের হাতে যাতে না যায় সেজন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করবেন। ১২ই ডিসেম্বর একদল পাকসেনা প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পায়ে হেঁটে বারোপাখিয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে গুলি করতে-করতে যমুনার পাড় ধরে এগুতে থাকে। তাদের লক্ষ্য ছিল ৮-৯ কিলোমিটার দূরবর্তী নগরবাড়ি ক্যাম্পে পৌঁছানো। মুক্তিযোদ্ধারা এ সংবাদ পাওয়ার পর দিকপুর নামক স্থানে পাকসেনাদের বাধা দেন। ফলে দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। দিকপুরের যুদ্ধে ইপিআর সদস্য মো. শাহজাহান আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এলএমজি নিয়ে পাকসেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন শত্রুদের গুলিতে শহীদ হন। ল্যান্স নায়েক আব্দুল আওয়াল (ইপিআর সদস্য) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক গুলিবিদ্ধ হন। আব্দুল খালেক ও শাহজাহান আলী একই বাংকারের মধ্যে পজিশন নিয়ে এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অনবরত গুলি করছিলেন। এক পর্যায়ে গুলি বন্ধ হলে আব্দুল খালেক বাংকার থেকে বের হয়ে পাকসেনাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। হঠাৎ শত্রুদের একটি গুলি আব্দুল খালেকের ডান হাতের নিচে পাঁজর ভেদ করে। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী তাঁর কোমরে থাকা গামছা দিয়ে আব্দুল খালেকের রক্তাক্ত ক্ষতস্থান বেঁধে দেন এবং তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আব্দুল খালেককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পথে ১৪ই ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
এ-যুদ্ধে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। অপরদিকে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক ও আমজাদ আলী শহীদ হন। ইপিআর সদস্য আব্দুল আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পাকসেনারা একটি এলএমজি ও ২টি রাইফেল ফেলে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় একজন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার ধৃত ও নিহত হয়। শহীদ আব্দুল খালেক ১৯৭১ সালে বেড়া বি বি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁকে বেড়া বি বি হাইস্কুল প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। তাঁর কবর সংরক্ষিত আছে। প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড