দাতিয়ারা গণহত্যা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর)
দাতিয়ারা গণহত্যা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর) সংঘটিত হয় ১৮ই আগস্ট। এতে ১৩ জন সাধারণ গ্রামবাসী শহীদ হন। ১.৭ই আগস্ট দুপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম এলাকার নাটাই, ভাটপাড়া, রাজঘর, খড়িয়ালা, বিরাসার প্রভৃতি গ্রামে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ২৩ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দাতিয়ারা ওয়াপদা ক্যাম্পে আটকে রেখে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৮ই আগস্ট রাতে তাদের মধ্য থেকে ১৪ জনকে হাত ও চোখ বেঁধে দাতিয়ারা ওয়াপদা অফিসের পূর্বদিকে মৌলভি আলী আজমের বাড়ির পাশে নিয়ে গুলি করে। এ-সময় নাটাই গ্রামের আবদুল মালেকের পুত্র আবরু খান মৃতবৎ পড়ে থাকে এবং রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি ১৩ জনকে হানাদাররা মাটিচাপা দেয়। দাতিয়ারা গণহত্যায় শহীদরা হলেন— নাটাই গ্রামের আবদুর রহমান ওরফে বুধু মিয়া, আবুল কালাম ওরফে আবুল কাশেম, ভাটপাড়া গ্রামের মছলন্দ আলী, সৈকত আলী, দুই সহোদর জব্বর আলী ও লাল মিয়া, খড়িয়ালা গ্রামের সমীর চন্দ্র দেব, রাজঘর গ্রামের মো. ইসমাইল, গোকর্ণ ঘাটের দারোগ আলী, আবদুল হাই, আমিনপুরের আবদুল আজিজ, চর গোঁসাইপুরের (নবীনগর) আবদুল জব্বার এবং সুরুজ মিয়া। পাকসেনা ও রাজাকারদের হাতে ধৃত অন্যরা দীর্ঘদিন নির্যাতন ভোগ করার পর শান্তি কমিটির সদস্য ও দালালদের মাধ্যমে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায়।
দেশ স্বাধীন হবার পর আবরু খানের সহায়তায় গণকবরটি চিহ্নিত করা হয় এবং ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ কবর খুঁড়ে ১৩ জন শহীদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশগুলো নাটাই গ্রামের প্রধান রাস্তার পাশে একটি দিঘির পাড়ে কবর দেয়া হয়। শহীদ আবদুর রহমানের ছেলে আবদুস সাত্তার গ্রামবাসীর সহায়তায় কবরস্থানটি পাকা দেয়াল দিয়ে চিহ্নিত করে রেখেছেন।
দাতিয়ারা গণহত্যা ও গ্রামবাসীদের ধরে নেয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা (জি আর-১৭৭/৭২) হয়েছিল। মামলায় অভিযুক্তরা হলো- পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর আশরাফ, সিকিউরিটি ক্যাপ্টেন রেজা, সিপাই আসমত খান ও সিপাই গণি খানসহ ১০-১২ জন; নাটাইর রাজাকার কমান্ডার আবদুস সালাম, মুতি মিয়া, হাবিবুর রহমান, ইউসুফ আলী, তারা মিয়া, বসু মিয়া, মতি মিয়া, তোতা মিয়া, বাচ্চু, হুমায়ুন, বজলু, খুরশেদ, মির্জা আলী, ছলিম, আবু ছায়েদ, জাহের মিয়া, তাজুল ইসলাম, হুমায়ুন-২, বিরাসারের সুরুজ মিয়া, দুলাল, হাকিম, হাফিজ, মুরাদ, ছেলামত; নাটাইর শান্তি কমিটির আহ্বায়ক অলিউর রহমান, সদস্য আবদুল আওয়াল, জারু মিয়া, ইসমাইল, হাজি পছন্দ আলী, বিরাসার গ্রামের কালা গাজী, আব্দুল মান্নান, আবদুল জলিল, সৈয়দ আলী, খুরশেদ মিয়া, আবদুল হাশিম, ভাটপাড়ার মন্তু মিয়া, আবদুল মালেক, আদম আলী এবং নুর মিয়া। [জয়দুল হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড