You dont have javascript enabled! Please enable it! দামপাড়া গণহত্যা (নিকলী, কিশোরগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

দামপাড়া গণহত্যা (নিকলী, কিশোরগঞ্জ)

দামপাড়া গণহত্যা (নিকলী, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় জুলাই মাসের শেষদিকে। নিকলী থানার ওসি-র নেতৃত্বে পুলিশ, রাজাকার ও পাকবাহিনী এ গণহত্যা চালায়। এতে অনেক মানুষ শহীদ হন।
মেজর দুররানির নেতৃত্বে নিকলীতে পাকবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপিত হওয়ার পর পুলিশ ও রাজাকাররা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। জুলাই মাসের শেষদিকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা নিকলীর দামপাড়া ও এর পার্শ্ববর্তী মজলিশপুর গ্রামে হামলা চালায়। এদিন তারা দামপাড়া গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা ইদ্রিস আলীর বাড়িতে প্রথমে লুটপাট এবং পরে অগ্নিসংযোগ করে। এদিন তারা মজলিশপুর গ্রামের পাল বাড়িতে লুণ্ঠন চালায়। দামপাড়া ও মজলিশপুরে পরিচালিত এসব হামলার ফলে সমগ্র এলাকায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ খবর পেয়ে হানাদার বাহিনী আবার দামপাড়ায় আসে। তারা রিলিফ কার্ড দেয়ার কথা বলে গ্রামের অনেক পুরুষকে থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর তাদের নদীর পাড়ে থানার পার্শ্ববর্তী শ্মশানখোলায় নেয়া হয়। নিকলী পাকিস্তানি হানাদার ক্যাম্পের মেজর দুররানি ও স্থানীয় রাজাকারদের পরামর্শে থানার পুলিশ বাহিনী তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে। থানার ওসি-র নির্দেশে নিরীহ মানুষদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে অনেকে প্রাণ হারান। শ্মশানখোলায় নিহত ৩৪ জনের পরিচয় জানা যায়। তাদের মধ্যে ৩১ জন হলেন দামপাড়ার। তারা হলেন- সুধীর সূত্রধর (পিতা বিপিন সূত্রধর), শিরীষ সূত্রধর (পিতা বিপিন সূত্রধর), মণীন্দ্র সূত্রধর (পিতা গোবিন্দ সূত্রধর), আরাধন সূত্রধর (পিতা কৃষ্ণমোহন সূত্রধর), কার্তিক সূত্রধর (পিতা আরাধন সূত্রধর), অবিনাশ সূত্রধর (পিতা নন্দলাল সূত্রধর), মধুসূদন সূত্রধর, নীতীশ সূত্রধর (পিতা মধুসূদন সূত্রধর), ক্ষিতীশ সূত্রধর (পিতা মধুসূদন সূত্রধর), সুরেন্দ্র সূত্রধর (পিতা মধুসূদন সূত্রধর), বনবাসী সূত্রধর (পিতা নবকিশোর সূত্রধর), সুনীল সূত্রধর (পিতা বনবাসী সূত্রধর), অনিল সূত্রধর (পিতা বনবাসী সূত্রধর), অমূল্য চন্দ্র পাল (পিতা নিমাই পাল), মোহনবাসী বর্মণ (পিতা দেবনাথ বর্মণ), জগৎবাসী বর্মণ (পিতা দেবনাথ বর্মণ), অভয় বর্মণ, যোগীন্দ্র বর্মণ, যতীন্দ্র বর্মণ (পিতা যোগীন্দ্র বর্মণ), রজনী বর্মণ, রসিক বর্মণ, প্রহ্লাদ বর্মণ, কৃষ্ণ কুড়ি, জ্ঞানচন্দ্র কর্মকার, গজেন্দ্র কর্মকার, গৌরহরি কর্মকার (পিতা গজেন্দ্র কর্মকার), বিনোদ চৌধুরী, অনুকূল রায় (পিতা অক্ষয় রায়), হীরেন্দ্র মোদক, গোকূল সাহা (পিতা গোবিন্দ সাহা) ও হীরেন্দ্র সাহা (পিতা মাধব সাহা)। নিহতদের ৩ জন ছিলেন বসন্তপুর গ্রামের। তারা হলেন— যোগেশ সূত্রধর, সুকুমার সূত্রধর (পিতা যোগেশ সূত্রধর) ও অবনি সূত্রধর (পিতা যোগেশ সূত্রধর)। হানাদার বাহিনীর আক্রমণে সেদিন অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হন। শহীদদের স্মরণে দামপাড়ায় একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। [মহিবুর রহিম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড