দামিহা গণহত্যা (তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ)
দামিহা গণহত্যা (তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ) সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনীর এ নৃশংস গণহত্যায় ১৪ জন মানুষ শহীদ হন।
উপজেলার দামিহা গ্রামটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। গ্রামের ব্রাহ্মণপাড়ায় জমিদার পরিবারের সদস্য উমেশ চৌধুরী বসবাস করতেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালে দূর-দূরান্তের অনেক মানুষ এ গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। তাছাড়া এ গ্রামটিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। ২০শে এপ্রিল নৌকাযোগে সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম তাড়াইল সদরে আসে। নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২ দিন অবস্থানের পর কিশোরগঞ্জ সদরে ফিরে যায়। ২৩শে এপ্রিল তারা পুনরায় তাড়াইল এসে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা দামিহা, নগরকুল এবং শিমুলহাটিতে চরম নৃশংসতা চালায়। এদিন তারা নগরকুল গ্রামে ৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং দামিহা গ্রাম ঘুরে যায়। ৩রা সেপ্টেম্বর রাজাকার ও শান্তি কমিটি-র সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দামিহার ব্রাহ্মণপাড়ায় গণহত্যা চালায়। ঘটনার দিন পাকিস্তানি বাহিনী ২টি নৌকাযোগে নরসুন্দা নদী এবং ধলেশ্বরী নদী দিয়ে তাড়াইল থেকে দামিহা গ্রামে আসে। দামিহা গ্রামে প্রবেশ করে লেবু বাগানের পাশে রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় পাকস্তানি সেনাবাহিনী কালীবাড়িতে প্রবেশ করে। তারা ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রবেশ করে ২টি বাড়ি, শুটকি মাছের গোলা ও ধানের গোলা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে গ্রামের ১৪ জনকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী গোপাল চন্দ্র বর্মণ, ওমর ফারুক প্রমুখ। গণহত্যায় গোপাল চন্দ্র বর্মণের মা ও ছোট ভাই শহীদ হন। দামিহা গণহত্যায় শহীদদের কোনোরকম সৎকার ছাড়াই নরসুন্দা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। গণহত্যার পর গ্রামটি প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। অনেকেই পার্শ্ববর্তী থানা ও গ্রামে চলে যায়। অনেকেই নদী ও হাওড় পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবির অথবা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। [মার্জিয়া লিপি]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড