বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেব বর্মা
দশরথ দেব বর্মা (১৯১৬-১৯৯৮) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, আদিবাসী নেতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সমর্থক ও ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত।
দশরথ দেব বর্মা (ত্রিপুরায় রাজা দশরথ হিসেবে জনপ্রিয়) ১৯১৬ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত
ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরার খোয়াই মহকুমার (বর্তমান জেলা) বোলতলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আগরতলার উমাকান্ত একাডেমিতে অধ্যয়ন এবং পরবর্তীকালে হবিগঞ্জের (বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জেলা) বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। উপজাতীয় জনগণকে শিক্ষিত এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তিনি ১৯৪৫ সালে জনশিক্ষা সমিতি গঠন করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে গণমুক্তি পরিষদ গঠন করে ত্রিপুরার রাজার দমনমূলক ও সামন্তবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিআই) যোগদান করেন এবং ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। তিনি ৪ বার (১৯৫২, ১৯৫৭, ১৯৬২ ও ১৯৭১) লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে দলে বিভক্তির ফলে তিনি সিপিআই (মার্কসবাদী)-তে যোগদান করেন এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। উপজাতীয় জনগণকে সমাজতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে ও চরমপন্থীদের কার্যকলাপ মোকাবেলায় তাঁর নেতৃত্বে ১৯৬৪ সালে ‘ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ’ গঠিত হয়। আমৃত্যু তিনি এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি প্রথমবারের মতো বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩- ৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৯৩-৯৮ সময়ে ত্রিপুরার ৮ম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিখিল ভারত কিষাণ সভার সহ- সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি লেখালেখির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ১৪ই অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতিরক্ষার জন্য দশরথ দেব মেমোরিয়াল কলেজ নামে খোয়াই জেলায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে ত্রিপুরার আদিবাসী নেতা দশরথ দেব বর্মা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। তিনি মুক্তিবাহিনীকে সম্ভাব্য সর্ব উপায়ে সাহায্য- সহযোগিতা দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালের ২৭শে মার্চ দশরথ দেব বর্মা-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করে। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড