You dont have javascript enabled! Please enable it!

দাউরা গণহত্যা (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

দাউরা গণহত্যা (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এতে ১৩ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
ঘটনার দিন হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহায়তায় নাসিরনগর থানাধীন গুনিয়াউক ইউনিয়নের দাউরা গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজনের বাড়িঘরে আক্রমণ চালায়। গ্রামের চারদিক থেকে আক্রমণ করে তারা বিভিন্ন বয়সের ২৬ জন নিরীহ লোককে ধরে এনে একটি পুকুরের পাড়ে দাঁড় করায়। হানাদার বাহিনী তাদের কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। কিন্তু তারা কোনো তথ্য দেয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা একযোগে তাদের ওপর গুলি চালায়। সঙ্গে-সঙ্গে তারা সবাই পুকুরে পড়ে যায়। ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের গায়ে গুলি লাগে। বাকি ১১ জন ভয়ে পুকুরে মৃতের মতো পড়ে থাকে। রাজাকাররা নিহত ১৩ জনের লাশের ওপর খড়ের গাদা ছড়িয়ে আগুন দেয়। এরপর বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পর রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তাদের চলে যাবার পর প্রাণভয়ে পালিয়ে থাকা এলাকাবাসী এগিয়ে এসে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। গুলিবিদ্ধ দুজন দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠে ৷ নিহত ও অগ্নিদগ্ধ ১৩ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে তাদের লাশ দাহ করার জন্য শ্মশানে নেয়া সম্ভব হয়নি। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে বড় একটি গর্ত খুঁড়ে তাদের লাশ একসঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হয়। যারা এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তাদের মধ্যে ১০ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন— দাউরা গ্রামের কৃষক শচীন্দ্র (৩৫), জগেশ্বর (৭০), মহেশ (৬৫), সুশান্ত (২৫), গোপেন্দ্র (৪০), নরেশ (২০), মহেন্দ্ৰ (৬০), যামিনী (৭০), নরেন্দ্র (৬০) ও চন্দ্রকুমার চক্রবর্তী (৪০; পুরোহিত)।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেসব রাজাকার জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে সাতগাঁর মধু (পরবর্তীতে নিহত), গুনিয়াউকের আতাব আলী, মিছির উদ্দিন, আক্কাছ আলী, আবদুর রহমান (চৌকিদার), একিন আলী ও মাহফুজ মিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে মধু রাজাকার ছিল ভয়ানক দুর্ধর্ষ ও অত্যাচারী। সে ছিল রাজাকারদের কমান্ডার। পুরো এলাকায় সে ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছিল। সে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়িতে আগুন দিত এবং হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করত। পাখি শিকারের মতো নিরীহ জনগণকে গুলি করে হত্যা করত। এলাকার সাধারণ লোকজন তার ভয়ে সব সময় আতঙ্কিত থাকত। [জামিল ফোরকান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!