You dont have javascript enabled! Please enable it!

দত্তপাড়া গণহত্যা (নাটোর সদর উপজেলা)

দত্তপাড়া গণহত্যা (নাটোর সদর উপজেলা) সংঘটিত হয় ৩রা মে। এতে ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন। ঘটনার দিন পাকহানাদার বাহিনী তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটি ও বিহারিদের সহায়তায় নলডাঙ্গা, গোকুল ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে নারদ নদী তীরবর্তী দত্তপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলো গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে চাপা দেয়৷
হানাদার বাহিনী প্রথমে নলডাঙ্গা ও গোকুল গ্রামে হামলা চালায়। গ্রামদুটি থেকে তারা ৩০ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে দত্তপাড়ায় ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলো মাটিচাপা দেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে জমির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিসহ ৭ জনকে কোদাল ও ঝুড়িসহ ধরে আনে এবং তাদের দিয়ে গর্ত খোঁড়ায়। গর্ত খোঁড়াকালে জমির উদ্দিনসহ তার সঙ্গীরা লক্ষ করে যে, আরো অনেককে বিভিন্ন গ্রাম থেকে পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে ধরে এনে মাটিতে বসিয়ে রেখেছে। জমির উদ্দিন গর্ত খোঁড়েন আর বন্দি মানুষদের সংখ্যা গণনা করেন। তিনি ১৫৭ জন পর্যন্ত গণনা করেন। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে হানাদার বাহিনী বন্দি এক- এক দলকে গর্তের সম্মুখে এনে দাঁড় করায়। এরপর তাদেরকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে গর্তে ফেলে দেয়। যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে গর্তের ভেতরে না পড়ে বাইরে পড়ে, তারা গলাকাটা মুরগির মতো দাপাদাপি করতে থাকে। এ অবস্থায় হানাদাররা তাদের লাথি দিয়ে গর্তে ফেলে দেয়। হানাদারদের হত্যাযজ্ঞ শেষ হলে তারা জমিরউদ্দিন এবং তার অন্য ৭ সঙ্গীকে তাদেরই খোঁড়া গর্তে ধাক্কা দিয়ে ফেলে জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। জমিরউদ্দিন মাটির আস্তর সরিয়ে অতি কষ্টে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। আপ্রাণ চেষ্টায় নিকটবর্তী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। একটু সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর তিনি প্রতিবেশীদের এই নারকীয় গণহত্যার বিষয়টি বিস্তারিত জানান। তিনি রাতের অন্ধকারে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় গণকবরে মাটিচাপা অবস্থায় জীবিত কেউ আছে কি-না তার অনুসন্ধান করেন। গর্তে লাশের ওপর স্তূপীকৃত মাটি সরানো হয়। কিন্তু কাউকেই আর জীবিত পাওয়া যায়নি। [মতিউর রহমান মর্তুজা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!