You dont have javascript enabled! Please enable it!

ত্রিমোহিনী ঘাট যুদ্ধ (সাঘাটা, গাইবান্ধা)

ত্রিমোহিনী ঘাট যুদ্ধ (সাঘাটা, গাইবান্ধা) সংঘটিত হয় ২৪শে অক্টোবর। এতে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরপক্ষে ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।
গাইবান্ধা রণাঙ্গনে প্রকাশ্য দিবালোকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে রোস্তম কোম্পানি-র যোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হচ্ছে ত্রিমোহিনী ঘাটের যুদ্ধ। এ-যুদ্ধ তখন এতটাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে, যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র- ও আকাশবাণী কলকাতার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল।
২৪শে অক্টোবর খুব ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী গোবিন্দগঞ্জ থানার হরিরামপুর ইউনিয়নের তালুক সোনাইডাঙ্গা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন আস্তানায় দ্বিমুখী আক্রমণ চালিয়েছিল। ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিরামহীন গোলাগুলি চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানাটি পূর্বপাশে আলাই ও পশ্চিম পাশে কাটাখালী নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বিভিন্ন গাছ-পালায় পরিবেষ্টিত এটি ছিল অত্যন্ত সুদৃঢ় ও নিরাপদ স্থান, যার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী দুপুর পর্যন্ত বিরামহীন আক্রমণ চালিয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের সামান্যতম ক্ষতি করতে পারেনি। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে তারা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। তারা আক্রমণ বন্ধ করে পিছু হটে ত্রিমোহিনী ঘাট পার হয়ে দলদলিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে গোপনে আশ্রয় নেয়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের গতিবিধির ওপর লক্ষ রাখা ও তাঁদের তথ্য জানার জন্য তাদের অনুসারী কয়েকজন দালালকে নিয়োজিত করে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের পরিকল্পনা ও ঊর্দ্ধতন কমান্ডের সঙ্গে ওয়ারলেসে যোগাযোগ করতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর কূটকৌশল বুঝতে পারেননি। তাঁরা মনে করেন যে, পাকিস্তানি বাহিনী তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকতে না পেরে ময়মন্তপুর বা দলদলিয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের জীবিত অবস্থায় ধরার জন্য উৎসাহী হয়ে ত্রিমোহিনী ঘাট পার হয়ে দলদলিয়া গ্রামে চলে আসেন। পুরো গ্রাম খুঁজে পাকিস্তানিদের না পেয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্রামের জন্য ধানক্ষেতের আলে বসে বিশ্রাম নিতে থাকেন। দালালদের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে এ খবর পৌঁছে গেলে তারা দ্রুত মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও শত্রুসেনাদের ওপর পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করেন। উভয় পক্ষে তুমুল ক্লোজকোয়াটার ব্যাটেল (সিকিউবি) সংঘটিত হয়। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমিত গুলি শেষ হয়ে যায়। অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা কৌশলে সরে পড়েন। এ-যুদ্ধে হামিদুর রহমান মধু, শহীদুল্লা, হবিবর রহমান, আব্দুল হাই, আনছার আলী, মোচারাম দাস, হাবিবুর রহমান, আব্দুল হাই, আহমেদ আলী, ধনঞ্জয় মোহন্ত, ভারত চন্দ্র ও প্রভাত চন্দ্র এই ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৭ জন সেনা নিহত হয়। শহীদ আব্দুল হাই-এর স্বজনরা তাঁর লাশ ঐ রাতেই তাঁদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে মথরপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করেন। এদিকে দলদলিয়া ও ময়মন্তপুর গ্রামের মানুষ দলদলিয়া গ্রামে দুটি কবরে ১১ জন শহীদের লাশ সমাহিত করে। স্বাধীনতার পর কোম্পানি কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকার দলদলিয়া গ্রামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিদুটি পাকা করে দেন।
ত্রিমোহিনী ঘাটের যুদ্ধের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বেড়ে যায়। অপরদিকে পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় অবাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। [গৌতম চন্দ্ৰ মোদক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!