ত্রিমোহনী বধ্যভূমি (নেত্রকোনা সদর)
ত্রিমোহনী বধ্যভূমি (নেত্রকোনা সদর) নেত্রকোনা সদর উপজেলায় অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।
নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কে মগড়া নদীর ওপর ত্রিমোহনী ব্রিজের অবস্থান। এ ব্রিজের একদিকে নেত্রকোনা সদর উপজেলা এবং অন্যদিকে পূর্বধলা উপজেলা। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এ ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ফলে এটি ত্রিমোহনী বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি পায়।
২৯শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নেত্রকোনায় অনুপ্রবেশ করে, তখন ৭০-এর নিবার্চনে জাতীয় পরিষদের পরাজিত প্রার্থী নেজামে ইসলামীর নেতা মওলানা মঞ্জুরুল হক, মুসলিম লীগ নেতা এ কে ফজলুল হক, জামায়াতে ইসলামী-র মনোনীত প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী মওলানা ফজলুল করিম প্রমুখ তাদের স্বাগত জানায়। এদিন পাকহানাদাররা শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে অনেককে হত্যা করে। তারা দালালদের সহায়তায় শহরের শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। এদিন জজকোর্টের সামনের রাস্তা থেকে পাকসেনারা সেন পরিবারের ডা. মিহির সেন, সিদ্ধার্থ সেন (সংস্কৃতি কর্মী), শঙ্কর সেন ও তাঁদের কাজের লোক করুণা দে-কে আটক করে এবং বিকেলে ত্রিমোহনী ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে তাঁদের গুলি করা হয়। গুলিতে সঙ্গে-সঙ্গে ডা. মিহির সেন, সিদ্ধার্থ সেন ও করুণা দে নিহত হন। শঙ্কর সেন ঘটনাক্রমে বেঁচে গেলেও তাঁর শরীরে ৫টি গুলি বিদ্ধ হয়।
একই দিন এখানে আরো যাদের হত্যা করা হয়, তারা হলেন— সুরেশ চন্দ্র সাহা রায় (মাছবাজার, নেত্রকোনা), সতীশচন্দ্র সরকার (সাকুয়া, নেত্রকোনা), দুর্গানাথ চক্রবর্তী (বড়বাজার), ব্রজেন্দ্র চন্দ্র সরকার (সাকুয়া, নেত্রকোনা), মতিলাল সাহা (মালনী, নেত্রকোনা), মতিলাল সাহা (ফকিরের বাজার, নেত্রকোনা), পীযূষ কান্তি সাহা (চাপারকোনা, বারহাট্টা), দীপক কুমার সাহা (গোপালপুর, বারহাট্টা), দিলীপ কুমার পাল (গোপালপুর, বারহাট্টা), সন্তোষ চন্দ্র পাল (মাছবাজার, নেত্রকোনা), সন্তোষ চন্দ্ৰ পাল (বারহাট্টা বাজার), রমেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী (বারহাট্টা), অজিত কুমার সাহা (ফকিরের বাজার, বারহাট্টা), সতীষ চন্দ্র সাহা (নেত্রকোনা), স্বদেশ দত্ত (নেত্রকোনা), যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, বিনন্দ চন্দ্র দে (মাছবাজার, নেত্রকোনা), মনীন্দ্র চন্দ্র সাহা, বিনয় ভূষণ সরকার (নেত্রকানা), দীনেশ চন্দ্র সরকার (নেত্রকোনা) ও অপর একজন। এরপর থেকে ত্রিমোহনী বধ্যভূমিতে প্রতিদিন কেউ না কেউকে হত্যা করা হতো। ঘাতকরা হত্যা করে মৃতদেহগুলো মগড়া নদীতে ভাসিয়ে দিত। ত্রিমোহনী বধ্যভূমিতে নেত্রকোনার অন্যতম শিক্ষাবিদ চন্দ্রনাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তী ও তাঁর জ্যেঠাতো ভাই দুর্গাচরণ চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। [আলী আহাম্মদ খান আইয়োব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড