তেলিগাতী গণহত্যা (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট)
তেলিগাতী গণহত্যা (মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট) সংঘটিত হয় ২৬শে মে। এতে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২৫ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
ঘটনার দিন পিরোজপুরে অবস্থানরত পাকবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকার বাহিনী একত্রে তেলিগাতী আসে। এদের নেতৃত্ব দেয় পঞ্চকরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোক্তার আলী খান। রাজাকার ও পাকবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে হাসেম আলী দিহিদার (হাসু), কাকার বিলের নুর শিকদার ও যশোরদির আফছার শেখ। অগ্রবর্তী দল রাজাকার বাহিনী তেলিগাতী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলি চালান। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে রাজাকারদের নেতৃত্বদানকারী শান্তি কমিটি-র অন্যতম নেতা মোক্তার আলী খান গুলিবিদ্ধ হয়। এ-সময় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের ওপর মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে। গোলার আঘাতে আব্দুল জব্বার খান ও মন্নান খান শহীদ হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে আত্মরক্ষার জন্য গ্রামের ভেতরে চলে যান। এ সুযোগে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা তেলিগাতী গ্রামে গণহত্যা শুরু করে। তারা ২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ২৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে শহীদরা হলেন- মো. মোক্তার উদ্দিন হাওলাদার (পিতা আমির হাওলাদার, চাপড়ী), মো. রফিজ উদ্দিন হাওলাদার (পিতা আমির হাওলাদার, চাপড়ী), মো. সাইজ উদ্দিন হাওলাদার (পিতা আমির হাওলাদার, চাপড়ী), মো. সাহাব উদ্দিন হাওলাদার (পিতা রফিজ উদ্দিন হাওলাদার, চাপড়ী), মো. হাচেন হাওলাদার (পিতা আমির হাওলাদার), আব্দুল লতিফ খান (পিতা কালাই খান (তেলিগাতী), আব্দুল আলী মাতুব্বর (পিতা অহেজ আলী মাতুব্বর, তেলিগাতী), আব্দুল মান্নান (পিতা আব্দুল রহমান তেলিগাতী), আব্দুল জব্বার খান (তেলিগাতী), আব্দুল বাশার খান (পিতা আব্দুল রহমান খান, তেলিগাতী), মো. খোরশেদ সরদার (পিতা আছির সরদার, তেলিগাতী), মো. মোবারেক শেখ (পিতা মোতাহার শেখ, তেলিগাতী), শেখ মুনছুর আলী (পিতা মো. আমিন উদ্দীন, তেলিগাতী), মো. সেকেন্দার বেপারী (পিতা আব্দুল কাদের বেপারী, তেলিগাতী), মো. মান্নান খান (তেলিগাতী), মো. ইসমাইল হোসেন (তেলিগাতী), মো. ইউসুফ আলী (তেলিগাতী), সুবাস চন্দ্র (তেলিগাতী), নিরঞ্জন মিস্ত্রী (তেলিগাতী) প্রমুখ।
রফিজ উদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী এবং সাহাবউদ্দিন হাওলাদারের মা জোবেদা খাতুন গোলাগুলির মধ্যে পুকুর পাড়ে একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। পাকবাহিনী ফিরে যাওয়ার সময় তাদের দেখতে পেয়ে জোবেদার গায়ে পরপর দুটি গুলি করে। গুলিতে তার মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় পাকবাহিনী কমান্ডার সিপাহিকে নির্দেশ দেয় ‘বেটিকো আরো একটি গুলি দাও’। এই হত্যাকাণ্ডে পাকবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে হাসেম আলী দিহিদার ও মোসলেম আলী খান। [শেখ মশিউর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড