You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.28 | তৈলকুপি গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

তৈলকুপি গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর)

তৈলকুপি গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর) ২৮শে মে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর এ গণহত্যায় ৭০ জনের মতো মানুষ শহীদ হন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের তৈলকুপি বাজারের মধ্য দিয়ে চলে গেছে জেলা সদরের সড়ক। রাস্তার পূর্ব পাশে রঘুরামপুর ও পশ্চিমে তৈলকুপি গ্রাম। পাকিস্তানি বাহিনী রসুলপুর রেলস্টেশনে প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে তারা ভুবনঘর গ্রামের ঘুংঘুর নদীর ওপর সুইস গেটের পাশে আরো একটি ক্যাম্প করে। তাদের ভয়ে ভুবনঘর, তৈলকুপিসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন ৪-৫ কিমি পূর্বে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। তৈলকুপি বাজারের উত্তর প্রান্তে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ২৮শে মে পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তৈলকুপি গ্রামে আক্রমণ করে। প্রায় দুই শতাধিক হানাদার বাহিনী তৈলকুপি গ্রামের পশ্চিম ও উত্তর দিক ঘিরে ফেলে এবং নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। বাড়ির আবদুর রহিমের বড় ছেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক ওরফে আশ্রাফ আলী ২-৩ দিন আগে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে এ খবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। তারা ঘরে ঢুকে মহিলাদের ওপর আক্রমণ করে। নির্বিচারে গণহত্যা শেষে তারা বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা পুরো গ্রামে রেখে যায় বর্বরতার চিহ্ন। হত্যাযজ্ঞ চলে সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। শহীদের সংখ্যা আনুমানিক ৭০। এর মধ্যে ২৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জুনাব আলী (৮০), হাবিল মিয়া মোল্লা (৪৫), ইসমাইল মোল্লা (৬০), আলী আহাম্মদ (৭০), রহিম আলী (৪৫), আবদুর রহিম সর্দার (৫০), আবদুর রাজ্জাক (২২), আলী আহাম্মদ (৬৫), ইউসুফ আলী (২০), কোরবান আলী (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৬০), ফুলজান বিবি (৬০), ওহীদনের নেছা (৪০), আমীর হোসেন (৫০), রজব বিবি (৩৫), ধন মিয়া (১৬), আয়েত আলী (৫০), হরমুজ আলী (৫০), আমিনা খাতুন (৪০), আলী আকবর (৪০), ইদ্রিস মিয়া (৪০), হারুন মিয়া (১৪), চেরাগ আলী (৪৫), সাফিয়া খাতুন (৩০), আলী মিয়া (২২), ফজরের নেছা (৭০), আয়েত আলী (৩২) ও ঝারু মিয়া (৩৫)। পরদিন হানাদার বাহিনী গ্রামে আবার আক্রমণ করলে শহীদদের লাশ ধর্মীয় রীতিতে দাফন করা যায়নি। মাত্র ৬-৭ জনকে গ্রামের পশ্চিম দিকের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে দাফন করা সম্ভব হয়। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড