You dont have javascript enabled! Please enable it! যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তোফায়েল আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক তোফায়েল আহমেদ

তোফায়েল আহমেদ, বীর প্রতীক (১৯২৭-২০১৯) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯২৭ সালের ১লা জুলাই ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব সিলুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের বাড়ি মজুমদারবাড়ি নামে খ্যাত ছিল। তাঁর পিতার নাম মুজাফফার আহমদ মজুমদার এবং মাতার নাম ফাতেমা খাতুন। তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তোফায়েল আহমেদ কর্ম জীবনের শুরুতে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি সিপাহি পদে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগ তোফায়েল আহমেদ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস্ (ইপিআর)-এ চাকরি লাভ করেন। তিনি ইপিআর-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালে তিনি সাতক্ষীরা মহকুমার কালীগঞ্জ সীমান্তে কর্মরত ছিলেন। ইপিআর-এ চাকরি করার কারণে তিনি বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণ গভীরভাবে দেখার সুযোগ পান। অন্য বাঙালি ইপিআর সদস্যদের মতো তাঁর মধ্যেও পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জন্ম হয়। ৭১-এর মার্চ মাসেই তাঁরা বাঙালি কোম্পানি কমান্ডার তোবারক উল্লাহর নেতৃত্বে পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সাতক্ষীরা এলাকার একাধিক প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি অংশ নেন। পরে ভারতে গিয়ে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। এ সেক্টরের অধীনস্থ হাকিমপুর ও ভোমরা সাবসেক্টরে তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে তোবারক উল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধে তোফায়েল আহমেদ আহত হন। সেপ্টেম্বর মাসে সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার বালিয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানিদের বেলুচ রেজিমেন্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। এ যুদ্ধ ৪ দিন ধরে চলে। প্রতিপক্ষের তীব্র আক্রমণ সত্ত্বেও তোফায়েল আহমেদ ও অন্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করেন। বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে উভয় পক্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাকসেনাদের অবিরাম গুলির মুখেও তোফায়েল আহমেদ বীরের মতো লড়াই করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তোফায়েল আহমেদকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস্ (বিডিআর; বর্তমান বিজিবি) -এ যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে তিনি নায়েক হিসেবে বিডিআর থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি ছাগলনাইয়ায় বসবাস করছিলেন। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি নিজের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ৩ কন্যা ও ৩ পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম শরিফা খাতুন। [জালাল আহমেদ]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড