You dont have javascript enabled! Please enable it!

তেলকুপি যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

তেলকুপি যুদ্ধ (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই নভেম্বর। যুদ্ধের স্থানটি শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। সীমান্তবর্তী আরেকটি গ্রাম হচ্ছে আজমতপুর। এ গ্রামের দুটি পাড়া- উত্তরপাড়া ও দক্ষিণপাড়া। ৬ই অক্টোবরের পর থেকে উত্তরপাড়ায় শিবগঞ্জের শাহজাহান মিঞা তাঁর প্লাটুন নিয়ে এবং দক্ষিণপাড়ায় মনাকষার ইদ্রিস আহমদ তাঁর প্লাটুন নিয়ে অবস্থান করছিলেন। ৫ই নভেম্বর ইদ্রিস আহমদের প্লাটুন আজমতপুর ছেড়ে তেলকুপি বিওপি (পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই এটি আছে) ও তার আশপাশে অবস্থান নেয়। এ সংবাদ তেলকুপির পাকদালাল আব্দুস সাত্তার (পিতা মারফত আলী) পাকসেনা ও রাজাকারদের আদিনা কলেজ ক্যাম্পে জানিয়ে দেয়। ক্যাম্পের প্রধান তাদের ধোবড়া ক্যাম্পের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৬ই নভেম্বর প্রত্যুষে দ্বিমুখী আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধোবড়া ক্যাম্প থেকে একদল পাকসেনা ও রাজাকার পাগলা নদীর ভাগুয়া ফেরিঘাটের পূর্বপাড়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা মনাকষা ও বিনোদপুর হয়ে ছোটটাপ্পুর কাছাকাছি পৌছামাত্র একজন গ্রামবাসী দ্রুত তেলকুপি গিয়ে ইদ্রিস আহমদকে এ খবর জানান। শত্রুবাহিনীর গতিরোধ করতে তিনি অতিদ্রুত তাঁর যোদ্ধাদের বিভিন্ন অবস্থানে পজিশন নিতে নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর নির্দেশমতো অবস্থান নেন এবং পাকসেনারা দৃষ্টিসীমায় আসামাত্র গুলি ছোড়েন। পাকসেনারাও বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। উভয় পক্ষে গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের অলক্ষ্যে তাঁদের পেছনে চলে আসে। একজন সাধারণ গ্রামবাসী তৎক্ষণাৎ এ বিষয়টি ইদ্রিস আহমদকে জানালে দ্রুত তিনি প্লাটুন নিয়ে আজমতপুরের দিকে সরে যান।
ভাগুয়া ফেরিঘাটে অবস্থানকারী কয়েকজন পাকসেনা পশ্চাদপসরণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় শাহজাহান মিঞার প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নিয়ে তাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়েন। কয়েকজন পাকসেনা নদীর ধার দিয়ে তেলকুপি গ্রামের সামনে গিয়ে তাদের সহযোদ্ধাদের পক্ষে সাপর্টিং ফায়ার করতে থাকে। এদিকে ইদ্রিস আহমদের যোদ্ধারা আজমতপুরের দিকে সরে যেতে থাকলে পাকসেনারা তাদের ধাওয়া করে। ইদ্রিস আহমদের প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারা তেলকুপি গ্রামের উত্তর প্রান্তের পানি নিষ্কাশন প্রণালীর উত্তরপাড়ে পৌঁছলে শাহজাহান মিঞার প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। পানি নিষ্কাশন প্রণালী এলাকায় উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। এ অবস্থায় ভারতের শরসানি বিএসএফ ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাপোর্টে মেশিন গানের ফায়ার ওপেন করা হয় এবং পাকসেনারা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পাকসেনারা তেলকুপি ছেড়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে ৩ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এবং গ্রামের বেশ কিছু বাড়িতে আগুন দেয়। একজন গ্রামবাসী প্রাণ রাক্ষার্থে পালাতে গিয়ে নিহত হন। তেলকুপি যুদ্ধে ৬-৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!