তেলিখালী যুদ্ধ (হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ)
তেলিখালী যুদ্ধ (হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ) সংঘটিত হয় ৩রা নভেম্বর। এতে মোট ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫৬ জন ভারতীয় সৈন্য শহীদ এবং ২৯ জন আহত হন। অপরপক্ষে বহু পাকসেনা নিহত হয়।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে সৃষ্ট একটি খাল বাগমারা থানার যাত্রাকোনা হয়ে দক্ষিণে বাংলাদেশের আচকিপাড়া-তেলিখালী সীমানা দিয়ে প্রবেশ করে বাঘাইতলা বাজারের পাশ দিয়ে কংশ নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ খালটি তেলিখালী খাল নামে পরিচিত। খালটির পশ্চিম কিনার ঘেঁষেই তেলিখালী সীমান্ত ফাঁড়ি। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তেলিখালী সীমান্ত ফাঁড়ির অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ফাঁড়িটিতে একটি শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপন করে। ক্যাপ্টেন খালেকের নেতৃত্বে দুশতাধিক পাকসেনা এ ঘাঁটিতে অবস্থান করত। চারদিকে ৯টি বাংকার দ্বারা পাকবাহিনী ঘাঁটিটিকে সুরিক্ষিত করে রেখেছিল। এ ঘাঁটির পতন ঘটাতে না পারলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে হালুয়াঘাট হয়ে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হওয়া কঠিন ছিল। কাজেই, তেলিখালী হানাদার ঘাঁটির পতন ঘটানো মুক্তিবাহিনীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ায় তাঁরা তেলিখালী ঘাঁটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। আক্রমণের আগে ১লা নভেম্বরের মধ্যে মেজর ভার্মা, সুবেদার ধরম পাল, কমান্ডার আবুল হাসিম প্রমুখ তেলিখালী ঘাঁটি রেকি সম্পন্ন করেন। আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরি করেন ব্রিগেডিয়ার গিল, ব্রিগেডিয়ার সান সিং বাবাজি, কর্নেল থাপা, মেজর স্বরূপ শর্মা, ক্যাপ্টেন অমর জিৎ, ক্যাপ্টেন তোকারাম, ক্যাপ্টেন ভূপেন্দ্র এবং কয়েকজন জেসিও। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২রা নভেম্বর রাতের শেষ প্রহরে (৩রা নভেম্বর) তেলিখালী হানাদার ঘাঁটি আক্রমণের সময় নির্ধারিত হয়। সিদ্ধান্ত হয়, মূল নেতৃত্বে থাকবেন ব্রিগেডিয়ার সান সিং বাবাজি। তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইউনিট কমান্ডার (ফিল্ড) কর্নেল রাঘবন, কর্নেল রাও ও গোলন্দাজ কমান্ডার কর্নেল থাপা। আক্রমণকারী বাহিনীর সঙ্গে থাকবেন ক্যাপ্টেন মালেক ও ক্যাপ্টেন সাজন। কড়ইতলা রাস্তায় ডা. মাহমুদ, বাঘাইতলা রাস্তায় লেফটেন্যান্ট কামাল এবং রামচন্দ্রকুড়া রাস্তায় সুবেদার জিয়াউল হকের নেতৃত্বে ৩টি গ্রুপ কাট অফ পার্টি হিসেবে থাকবে। তেলিখালী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে ভারতের যাত্রাকোনা সীমান্তে ডা. ক্যাপ্টেন পিমপ্লে-র নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। তেলিখালী হানাদার ঘাঁটিতে পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে একযোগে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তেলিখালী হানাদার ঘাঁটি আক্রমণে দুই কোম্পানি ভারতীয় সৈন্য এবং মুক্তিবাহিনীর আবুল হাসিম কোম্পানি, উইলিয়াম ম্রং কোম্পানি, আবদুল গণি কোম্পানি, আলী হোসেন কোম্পানি ও আবদুল হালিম কোম্পানি থেকে চার শতাধিক চৌকস মুক্তিযোদ্ধাকে প্রস্তুত রাখা হয়। এঁদের মধ্যে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন শতাধিক।
২রা নভেম্বর রাত ৯টায় যাত্রাকোনা প্রাইমারি স্কুল মাঠ থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সৈন্যগণ এসেম্বলি এরিয়ায় সমবেত হন। তাঁরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠের উত্তর পাশে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করতে থাকেন। এরপর ব্রিগেডিয়ার সান সিং বাবাজি সকল সৈন্যকে ফল-ইন করিয়ে প্রতিটি কোম্পানি ও প্লাটুন কমান্ডারদের যুদ্ধের পরিকল্পনা ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। যুদ্ধের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আড়াইটার মধ্যে ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে প্রথম ধাপে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কাট অফ পার্টি, দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করে ফায়ার বেসের সৈন্য এবং তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করে আক্রমণকারী মূল বাহিনী। রাত ৩টায় তিনদিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু হয়। দুপক্ষের মধ্যে চলে গুলি বিনিময়। মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজি উল্লাহ (ল্যান্স নায়েক নং ১৫৪১২), হাবিলদার মেজবাহ উদ্দিন (প্লাটুন কমান্ডার), ইদ্রিস হোসেন, রঞ্জিত গুপ্ত (ময়মনসিংহ), হযরত আলী (ফুলপুর) প্রমুখ তেলিখালী খাল পার হয়ে গিয়ে গ্রেনেড চার্জের মাধ্যমে ৪টি বাংকারের ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হলেও পাকসেনাদের গুলিতে ওয়াজিউল্লাহ ও হযরত আলী শহীদ হন। আরেকটি বাংকারের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে শহীদ হন শওকত আলী (সরিষাবাড়ি)। এরপর হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন আকতার হোসেন সরকার (হালুয়াঘাট), শাহজাহান আলী (ময়মনসিংহ), আলাউদ্দিন (ময়মসিংহ সদর)-সহ ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের পাশাপাশি ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী হানাদার ঘাঁটির ওপর কামানের গোলা নিক্ষেপ শুরু করলে পাকবাহিনী কোনঠাসা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দিলে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বাংকারগুলো তাদের দখলে চলে আসে। এদিকে ক্যাপ্টেন মালেকের নির্দেশে ভারতীয় ৪৬২ ও ৪৬৩নং ব্যাটারি ২৬টি এইচএমজি ও ৮টি ফিল্ড গানের সাহায্যে ফায়ার শুরু করে। দুর্ভাগ্যবশত নিজেদের গোলার আঘাতে ১৩ জন ভারতীয় সৈন্য শহীদ হন। পাকবাহিনীর পালানোর কোনো পথ ছিল না। সুতরাং উভয় পক্ষের মধ্যে মরণপণ যুদ্ধ চলে; বাড়তে থাকে হতাহাতের সংখ্যা। ভোর ৪টা নাগাদ সবগুলো বাংকার মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং চার্জ করে বাংকারগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়। অতঃপর দালানের সামনে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতাহাতি লড়াই হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ১১ জন পাকসেনা বন্দি হয় এবং অবশিষ্ট সকল পাকসেনা নিহত হয়। উত্তেজিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা বন্দি ১০ পাকসেনাকে মেরে ফেলেন। শুধু হাবিলদার মেজর কেরামত আলী খাঁকে বন্দি অবস্থায় ~ মুজিবনগর সরকার-এর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ-যুদ্ধে মোট ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৫৬ জন ভারতীয় সৈন্য শহীদ হন। আহত হন ২৯ জন। তাঁদের গণকবর দেয়া হয়। গণকবরটি সংরক্ষিত করা আছে।
তেলিখালী যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উইলিয়াম ম্রং (কোম্পানি কমান্ডার, চরবাঙ্গালিয়া, হালুয়াঘাট), ওয়ালটার ম্রং (জলছত্র, মধুপুর), আগস্টিন সাংমা (কুমারগাতী, হালুয়াঘাট), ইলিপ কুমার সাংমা (জয়রামকুড়া, হালুয়াঘাট), কাজল সাংমা (গোবরাকুড়া, হালুয়াঘাট), কান্তি সাংমা (নলকুড়া, হালুয়াঘাট), কার্নেশ আজিম (গাছপাড়া, নালিতাবাড়ী), কাজল সাংমা (গোবরাকুড়া, হালুয়াঘাট), জেভিয়ার স্মাল (কাতলমারী, হালুয়াঘাট), দিপসন সাংমা (ধাইরপাড়া), দিপারসন ঘাগ্রা (চরবাঙ্গালিয়া, হালুয়াঘাট), দেবেশ মারাক (কুমুরিয়া, হালুয়াঘাট), প্রদীপ তজু (মোজাখালী, হালুয়াঘাট), প্রদীপ সাংমা (জয়রামকুড়া, হালুয়াঘাট), প্রদ্যুস সাংমা (বিড়ইডাকুনী, হালুয়াঘাট), ভাস্কর চিরান (চন্দ্রকোণা ধোবাউড়া), মাতিয়াস সাংমা (গোবরাকুড়া, হালুয়াঘাট), ম্যানুয়েল চিগিচাক (গোবরাকুড়া, হালুয়াঘাট), রঞ্জিত মারাক (সাপমারীকান্দা, হালুয়াঘাট), রমেন্দ্র আজিম (কুমুরিয়া, হালুয়াঘাট), রেমন চিচাম (রায়পুর, ধোবাউড়া), রোকেস সাংমা (নলকুড়া, হালুয়াঘাট), শ্যামল সাংমা (গোবরাকুড়া, হালুয়াঘাট), নজরুল ইসলাম, নূর ইসলাম, আনছার আলী, তুলা মিয়া, মিজানুর রহমান, আবদুল হাই, আখতারুজ্জামান, আবদুল হালিম, মোজাম্মেল হক, আমির আলী, নুরুল ইসলাম (ফুলবাড়িয়া), মোজফ্ফর আলী, আবদুর রহমান, আফাজ উদ্দিন, লিয়াকত আলী, শিমন মারাক (কুমুরিয়া, হালুয়াঘাট), সরচরণ সাংমা (ভুবনকুড়া, হালুয়াঘাট), সুকাশ সাংমা (কুমুরিয়া, হালুয়াঘাট), সুকেন্দ্র সাংমা (মোজাখালী, (মোজাখালী, হালুয়াঘাট), সুজিত মারাক (কালিয়ানীকান্দা, হালুয়াঘাট), সুশীল ঘাগ্রা (ধলাপানি), পৌল সাংমা (বোয়ালমারী), হার্ডসন সাংমা (ধলাপানি), নিকোলাস মারাক (বাঘাইতলা), অনুপ দিও (দুর্গাপুর, নেত্রকোনা), দীরেন্দ্র সাংমা (ঝিনাইগাতী), নিখিল মানখিন ( ঝিনাইগাতী), গোকুল হাজং (ঝিনাইগাতী), একান্ত চিরান (ঝিনাইগাতী), আলবার্ট ম্রং (দুধনই, ঝিনাইগাতী), নরবার্ট ম্রং (দুধনই, ঝিনাইগাতী), কনডেট সাংমা (বারোমারী), নকান্ত সাংমা (বনখালী), আবদুল গণি (কোম্পানি কমান্ডার, ছাতুগাঁও), নূরুল ইসলাম (কলমাকান্দা), আবদুল হান্নান খান (ধোবাউড়া), জামাল উদ্দিন (ছাতুগাঁও), আবদুল হালিম (ছাতুগাঁও), নজরুল ইসলাম (জিগাতলা), সুবোধ দেবনাথ (মোহনগঞ্জ), খালেদ জাহাঙ্গীর (কোয়ারী), বজলুর রশিদ (ঠাকুরাকোনা), অরবিন্দ সাংমা (কুমুরিয়া), আলেক মারাক (খয়রাকুড়ি), তারক সাংমা (খয়রাকুড়ি), লিও চিসাম (ঘোষবেড়), রিনেন্দ্র হাজং (গোপালপুর, দুর্গাপুর), অধীর মারাক (গান্ধীগাঁও, ঝিনাইগাতী), সিরাজুল ইসলাম (নকলা), দীপক চন্দ্র মিত্র (বেগুনবাড়ী), আবুল হাসিম (কোম্পানি কমান্ডার), আবদুর রব (প্লাটুন কমান্ডার), এস কে হাফিউদ্দিন (প্লাটুন কমান্ডার), নূরুল ইসলাম (প্লাটুন কমান্ডার), আতাউদ্দিন শাহ (প্লাটুন কমান্ডার), নাজিম উদ্দিন, বিমল কুমার পাল, খালেকুজ্জামান, আবদুল মোতালেব, রমজান আলী, ওয়াজেদ আলী, ক্ষুদিরাম পাল, কেরামত আলী, ইসরাইল, নজরুল ইসলাম, চন্দ্রকিশোর সরকার, ইবরাহীম, আবদুস ছালাম, আলী হোসেন, মোশারফ হোসেন, শামসুল হক, আবদুল করিম, এরশাদ আলী, মফিজ উদ্দিন, আবদুল কাদের, সুরহাক আলী, আবদুল হামিদ, আবদুল কদ্দুস, রিয়াজ উদ্দিন, জাদর আলী, নবী হোসেন, আবদুর রহমান, আনছার আলী, এ. রশিদ, আবদুল হাই, ছোহরাব আলী, মনির উদ্দিন, সদর আলী, কাশেম আলী, হাসমত আলী, শামছুল হক, হোসেন আলী, ইনতাজ আলী, আরব আলী, এবিএম ফারুক, ফজলুর রহমান, আতাব উদ্দিন, আহম্মেদ আলী, বোরহান উদ্দিন, মোছলেছুর রহমান, আতাউর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, আকরাম হোসেন, হেলাল উদ্দিন, মতিউর রহমান, আবুল হোসেন, চান মিয়া, দেবল চন্দ্র দত্ত, রবার্ট সরকার, আবদুল বারী, আবদুল বারী, আবদুস ছোবহান, আবদুল মান্নান, হাছান আহমেদ আনসারী, সৈয়দ ফারুক রেজা, আবদুল ওয়াহেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শেখ নুরুল আমীন, ইউসুফ আলী, লিয়াকত আলী, আজিজুর রহমান, সমশের আলী, জগদীশ মোহন চন্দ্র, আতর আলী, আবু হানিফ, আবু তাহের, রমজান আলী, মহিউদ্দিন ভূঁইয়া, সাইদুর রহমান, আহমদ আলী, আকরাম হোসেন, সোহরাব আলী, রফিকুল আলম, হরিশংকর মজুমদার, দীপক চন্দ্র, এমদাদুল হক, হুমায়ুন করিব, হাফিজুল ইসলাম, আবদুল লতিফ, সিদ্দিক আলী, মঞ্জুরুল হক, সুশীল চন্দ্র দত্ত, আবদুল কাদির, জালাল উদ্দিন, আবদুল আজিজ, আবদুল হাই, ইজাব হোসেন, জমশেদ আলী, স্বপন নাগ, বদিউল আলম, আবদুছ ছামাদ, রফিক উদ্দিন, মোসেম উদ্দিন, এম এম জে সরওয়ার, নবী হোসেন, ওয়াজেদ আলী, আবদুল জব্বার, কামাল উদ্দিন, আবদুল মফিজ, মনির উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, সেকান্দার আলী, তপন কুমার আচারিয়া, আজিজুল হক, শামসুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল করিম, ফকর উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, পচন আলী, হরিচন্দ্র সিংহ, সেলিম আহমেদ, সুধীর চন্দ্র দাস, অজয় কুমার, এস এস নুরুল হোসেন, শহিদুজ্জামান, মোহর আলী, এ এইচ এম কাশেম, শাহজাহান বাদশা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। [শফিউদ্দিন তালুকদার]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড