You dont have javascript enabled! Please enable it!

তেলিয়াপাড়া হেডকোয়ার্টার্স যুদ্ধ (মাধবপুর, হবিগঞ্জ)

তেলিয়াপাড়া হেডকোয়ার্টার্স যুদ্ধ (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই মে। এতে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।
লালচান্দ, শাহজীবাজার ও নোয়াপাড়া এলাকায় ৬ দিন ব্যাপী আক্রমণ পরিচালনা করে ক্লান্ত হয়ে ক্যাপ্টেন মতিন তেলিয়াপাড়াস্থ সদর দফতরে অবস্থান নিচ্ছিলেন। তাঁর সৈন্যরা খুবই ক্লান্ত। ক্ষণিক বিশ্রামে যাওয়া সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর নিকট ক্যাপ্টেন মতিন তাঁর যুদ্ধ-বিষয়ক বিবরণ শুরু করার সঙ্গে-সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে রাইফেলসহ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের শব্দ ভেসে আসে। কয়েকটি বুলেট এসে সদর দফতরের শনের তৈরি বেড়ায়ও আঘাত আনে। এ অবস্থায় তাঁরা বেরিয়ে একটি বিষাদময় দৃশ্য দেখতে পান। মুক্তিযোদ্ধাদের অজান্তেই ইতোমধ্যে পাকিস্তানিরা ভারতীয় বিএসএফ-এর ছদ্মবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা এলাকার ভেতরে একটি অভ্যন্তরীণ বৃত্ত তৈরি করে ফেলে। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফিল্ড প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা যথেষ্ট দৃঢ় এবং সুসংহত ছিল। যোগাযোগ পরিখাসহ ঊর্ধ্বস্থিত আচ্ছাদন চলাফেরার জন্য উপযোগী ছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন মতিনের সৈন্যদের সমস্যা হলো তাঁরা প্রতিরক্ষা লাইনে ছিলেন না। কারণ ইতঃপূর্বেকার অপারেশনে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত সৈন্যদের সকলেই ততক্ষণে মাটিতেই শুয়ে পড়েছিলেন। নিদ্রা থেকে অতর্কিত আক্রমণের গুলির শব্দে জেগেই তাঁরা অনেকটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। ক্যাপ্টেন মতিন ওয়াকিটকির মাধ্যমে নির্দেশ দেন সৈন্যরা যেন প্রতিরক্ষায় জড়িত কোম্পানির সাহায্যে এগিয়ে যান। তিনি নিজে একটি উঁচু অবস্থানের দিকে এগিয়ে যান। তিনি লক্ষ করেন, একটি মেশিনগান চারদিকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে চলেছে আর শত্রুরা তাদের তাবৎ গোলাগুলি ঐ একমাত্র মেশিনগানটির ওপরে নিক্ষেপ করে চলেছে। এক সময় পাকিস্তানিদের বেশ কয়েকটি অবস্থান স্তব্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পরাস্ত হয়ে ফিরে যেতে থাকে। ক্যাপ্টেন মতিন সেই মেশিনগান পোস্টের দিকে অগ্রসর হন।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক আব্দুর রহমান এটি চালাচ্ছিলেন। ক্যাপ্টেন মতিনকে দেখে তিনি চিৎকার করে বলেন-‘স্যার, মাথা নিচু করুন’। ক্যাপ্টেন মতিন মাথা নিচু করে তাঁর পাশে দাঁড়ান। মেশিনগান ছাড়াও রহমানের কাছে একটি চীনা স্বংয়ক্রিয় রাইফেল ছিল। শত্রুরা যদি কাছাকাছি আসে তাহলে হাতাহাতি যুদ্ধের জন্য বেনোয়েট তাক করে রাখা হয়েছিল। রহমান জানতেন না যে, পাকিস্তানিরা পালিয়ে গেছে। ক্যাপ্টেন মতিন তাঁকে সঠিক অবস্থা বুঝানোর পর রহমান শান্ত হন। পাকিস্তানিদের এই আক্রমণে তাদের দুই কোম্পানি সৈন্য ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী আক্রমণে তারা পরাস্ত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকে। অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তেলিয়াপাড়া যুদ্ধ স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!