You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.22 | তিনগাছা যুদ্ধ (পাবনা সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

তিনগাছা যুদ্ধ (পাবনা সদর)

তিনগাছা যুদ্ধ (পাবনা সদর) সংঘটিত হয় ২২শে অক্টোবর। চরমপন্থী নকশাল ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত। এ-যুদ্ধে ৩৪ জন নকশাল নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। কয়েকজন নকশাল জীবিত ধরা পড়ে। বাকিরা পালিয়ে যায়। বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।
পাবনার ঐতিহ্যবাহী চৌবে পরিবারের বসবাস ছিল পাবনা সদর থানার তিনগাছা গ্রামে। তিনগাছা গ্রামটি আম ও লিচুর বাগান দ্বারা বেষ্টিত। এ বাগানেই ছিল বিলু বাবুদের বাড়ি। বিলু বাবুর পিতা ফকির বাবু এক সময় দাপুনিয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পাবনা সদর থানার তিনগাছা বাবুদের বাগানে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা টিপু বিশ্বাসের নকশাল বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ৭১ সালে টিপু বিশ্বাসের নকশাল বাহিনী এ বাগানবাড়িটি দখল করে শক্তিশালী বাঙ্কার তৈরি করে। শ্রেণিশত্রু খতমের নামে তারা এখানে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষজনদের ধরে এনে হত্যা করত। বাগান বেষ্টিত হবার সুবাদে মুক্তিযোদ্ধারা নকশালদের সঙ্গে যুদ্ধ করে সুবিধা করতে পারতেন না। নকশালদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা দূর থেকে মাঝে-মধ্যে দুই ইঞ্চি মর্টার শেল নিক্ষেপ করতেন। কিন্তু এতে নকশালদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হতো না। নকশালদের দমন করতে কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বাবু, ইসরাইল হোসেন মেছের, সাইদ আখতার ডিডু এবং দুলাল হোসেন তিনগাছা গ্রামে গেরিলা আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় গোলাবারুদসহ ডা. আবুল হোসেনের বাড়িতে সমবেত হন। এ বাড়িতে বসে তাঁরা তিনগাছা যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে সবাই নাজিরপুরের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। রাস্তায় তখনো কাদা-পানি ছিল। তিনগাছা বাবুর বাগানে পৌঁছামাত্র নকশালরা গোপন আস্তানা থেকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও একযোগে আঘাত হানেন। তাঁরা ক্রলিং করে বাগানে ঢুকতে থাকেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীয়ত এলএমজি নিয়ে একটানা ফায়ার করতে থাকেন। নকশালরা পাল্টা আক্রমণের কোনো সুযোগই পায়নি। ফায়ারের শব্দে পাশের গ্রামে অবস্থানরত নাজিরপুর ও টিকরী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধারাও তিনগাছা গ্রামের পূর্ব প্রান্তে অবস্থান গ্রহণ করেন। দুদিক থেকে আক্রমণ শুরু হলে নকশালরা টিকতে না পেরে অস্ত্র ফেলে কোনোমতে জীবন নিয়ে পালিয়ে যায়। রক্তক্ষয়ী এ-যুদ্ধে নকশালদের ৩৪ জন চরমপন্থী নিহত হয় এবং কয়েকজন জীবিত ধরা পড়ে। যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহরম এবং সানা শহীদ হন। তিনগাছা যুদ্ধে দুটি ব্রিটিশ এলএমজি, একটি ব্যাটাগানসহ ২৮টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [মো. ছাবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড