You dont have javascript enabled! Please enable it!

তুল্লাপাড়া অপারেশন (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

তুল্লাপাড়া অপারেশন (নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পরিচালিত হয় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। এতে নাসিরনগর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সওয়াব মিয়া চৌধুরীসহ কয়েকজন পুলিশ, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য নিহত হয়।
শান্তি কমিটি ও এলাকার চেয়ারম্যান সৈয়দ সওয়াব মিয়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে নাসিরনগরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করে। যারা অস্বীকৃতি জানায় তাদের সে হত্যার ভয়-ভীতি দেখায়। এমনকি সওয়াব মিয়া তুল্লাপাড়ার রাজকুমার দাসকেও রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করে। সওয়াব মিয়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করে পাকবাহিনীকে দেয়। নাসিরনগর থানার কিছুসংখ্যক বাঙালি পুলিশও সওয়াব মিয়া চৌধুরীর সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। এসব কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সওয়াব মিয়াকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। নাসিরনগরের বিভিন্ন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান গড়ে ওঠে। এসব গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের ওপর অতর্কিতে গেরিলা আক্রমণ চালান। ঘটনার দিন নূরপুরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন যে, সরাইল থানার ধরন্তিঘাট থেকে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনীসহ শান্তি কমিটির কয়েকজন সদস্য নৌকাযোগে নাসিরনগর যাচ্ছে এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নূরপুর থেকে এগিয়ে এসে নাসিরনগর রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান নেন। রাস্তার পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি খাল দিয়ে পাকিস্তানি পুলিশ, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা নৌকায় করে নাসিরনগরের দিকে অগ্রসর হয়। বিকেল ৫টার দিকে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা এখানে রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়ে দালাল ও রাজাকারবাহী নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সন্ধ্যা নাগাদ নৌকাটি তুল্লাপাড়ার পূর্বপাশ অতিক্রম করলে সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের আওতায় চলে আসে। সঙ্গে-সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে নৌকাটির ওপর আক্রমণ করেন। অতর্কিত এ আক্রমণে পাকিস্তানি দালাল, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রাণে বাঁচার জন্য তারা পানিতে ঝাঁপ দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ আক্রমণে নাসিরনগর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ সওয়াব মিয়া চৌধুরীসহ কয়েকজন পুলিশ, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এলাকাবাসীকে গ্রাম ছেড়ে চেলে যেতে বলেন। এর দুদিন পর পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আশপাশের গ্রামে আক্রমণ চালায়। তুল্লাপাড়া ও মুসলিমপুর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তারা আগুন দেয়।
মাত্র ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা ব্যর্থ হন। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা সমগ্র এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তুল্লাপাড়া ও মুসলিমপুর গ্রামে শত্রুবাহিনীর যেসব সদস্য ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল তাদের মধ্যে বাবু মিয়া চেয়ারম্যান (ফান্দাউকা), তাজউদ্দিন (দাঁতমণ্ডল), সিদ্দিক মিয়া (দাঁতমণ্ডল), তমিজ উদ্দিন (তুল্লাপাড়া, শান্তি কমিটির সদস্য), নুরুদ্দিন (শাহজাদপুর), ইদ্রিছ মিয়া, অহিদ আলী মীর (কুণ্ডা) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এই ধ্বংসযজ্ঞে হানাদার বাহিনীর ৫০-৬০ জন সৈনিক সম্পৃক্ত ছিল। [জামিল ফোরকান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!