তুষভাণ্ডার যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট)
তুষভাণ্ডার যুদ্ধ (কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট) সংঘটিত হয় নভেম্বর মাসের শেষদিকে। কালীগঞ্জ উপজেলার উল্লেখযোগ্য এ-যুদ্ধে অনেক পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। অপরদিকে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
তুষভাণ্ডার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান রেল স্টেশন। এর পাশে তুষভাণ্ডার ঈদগাহ মাঠ, মাঠের বাম প্রান্তে করিমউদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জুলাই মাসে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্প ছিল তাদের প্রধান নির্যাতনকেন্দ্র। এ ক্যাম্প থেকে তারা পার্শ্ববর্তী কাকিনা, কাশিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অপারেশন চালিয়ে লোকজন হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করত। এ ক্যাম্পে তারা স্কুল শিক্ষক আব্দুল গফুরসহ একাধিক লোককে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা করে। কয়েকজন জেলে ভারতে যাওয়ার পথে ক্যাম্পের রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের ক্যাম্পে নিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সৈন্যদের এ ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা বড়খাতা ও হাতীবান্ধা দখল করে নভেম্বর মাসের শেষদিকে কালীগঞ্জ দিয়ে লালমনিরহাটের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। কালীগঞ্জ অতিক্রমকালে মাহতাব আলী সরকার (গঙ্গাচড়া, রংপুর)-এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ১১ সদস্যের একটি দল তুষভাণ্ডারে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায়। দুপক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হয়। মাহতাব আলী সরকার ছাড়া যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বাকি ১০ সদস্যই শহীদ হন। এরূপ অবস্থায়ও মাহতাব আলী সরকার একাই যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেশি বোঝানোর জন্য পাকিস্তানি ক্যাম্পের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে-ঘুরে গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলি শেষ হয়ে যায়। এদিকে মাহতাব আলী সরকার গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখেন। পাকিস্তানি হানাদারদের গুলি বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় জনগণ লাঠি, বল্লম, বাহুকা সহকারে ক্যাম্পে হামলা চালায় এবং সেখানে জীবিত পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের জন্য মাহতাব আলী সরকারকে বাংলাদেশ সরকার ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত করে। [আজহারুল আজাদ জুয়েল]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ৪র্থ খণ্ড